Thursday 13 October 2016

এরকম মুসলিম কই?! কোথায় আছে এরকম মুসলিম?!

ইউটিউবে ইনজামাম উল হকের একটা দারুন ভিডিও দেখলাম। আপনারা যানেন যে উনি এখন দাওয়াহর কাছে নিয়োজিত আছে। আসলে উনি একটা ঘটনা শোনান। ঘটনাটা মুসলিম উম্মাহর জন্য এতটাই শিক্ষনীয় যে, আমি না শেয়ার করে পারছি না। একবার ইনজামাম, মুহা. ইউসুফ এবং ব্রায়ান লারা ডিনার করছিলেন। খেতে খেতে মুহা. ইউসুফ ব্রায়ান লারাকে ইসলামের ব্যাপারে বলছিলেন। তিনি বলছিলেন ইসলাম পরিবারের ব্যাপারে কি বলে, স্ত্রীর সাথে ব্যবহার নিয়ে কি বলে, লেনদেন ব্যাবসার ব্যাপারে কি বলে, সমাজ এবং রাষ্ট্রের ব্যাপারে কি বলে ইত্যাদি। একজন মুসলিম কেমন হবে সে ব্যাপারেও বলেন। সব শোনার পর ব্যায়ান লারা কিছুক্ষন চুপ থাকেন। তারপর বলেন, 'আপনি যা শোনালেন তার সব গুলোই খুব ভালো। প্রত্যেক মানুষকেই এসব মেনে চলা উচিত। অবশ্যই এটা উত্তম আদর্শ। কিন্তু এরকম মুসলিম কই?! কোথায় আছে এরকম মুসলিম?!' ইনজামাম সেই রাতে ঘুমোতে পারেননি শুধু এই প্রশ্নের জন্য।তাঁর কাছে টাকা পয়সা, মান সম্মান, দশ হাজার রান সবই ছিল। তারপরেও শুধু এই প্রশ্নের জন্য তিনি দাওয়াহ দেওয়া শুরু করেন। মাশা'আল্লাহ! আল্লাহ উনাকে সফলতা দান করুন।

আমাদের সবার উচিত এই প্রশ্ন নিয়ে চিন্তাভাবনা করা। আমরা ইসলামের আদর্শের কথা প্রচার করি কিন্তু নিজে তা সঠিকভাবে মানিনা। আমরা ভুলে যায় ইসলামের সব ভালো কথায় প্রথমে নিজের জন্য। নিজে মেনে চলার জন্য। উমার (রা.) বলতেন সব থেকে ভালো দাওয়াহ হল যা নিজের ব্যবহার দ্বারা করা হয়। আমরা যতক্ষন ভালো মুসলিম না হবো ততক্ষন ইসলামের আদর্শ অন্যদের প্রভাবিত করবে না। এটা স্বাভাবিক একটা ব্যাপার। কেউ যদি বলে আমার কাছে আলো আছে আর সে নিজেই অন্ধকারে থাকে তবে কে তার কথায় বিশ্বাস করবে? আমার খুব ভালো লাগা একটা কথা আপনাদের শোনাব, পপ স্টার ক্যাট স্টীভেন্স একবার বলেছিলেন, 'ভালো হয়েছে আমি মুসলিমদের সাথে পরিচিত হওয়ার আগেই কুর'আন পড়ে নিয়েছিলাম। আজকের মুসলিমদের দেখে আমি কখনওই কুর'আন পড়তাম না (এবং ইসলাম গ্রহণ করতাম না)।

Wednesday 12 October 2016

ফেসবুক পোষ্ট - ২

✿ মহরম কোন শোকের মাস নয়। ৯ এবং ১০ মহরম আশুরার রোজা। এই রোজা শোকের রোজা নয়। এই রোজা রাসুল (সা.) করতেন এবং করতে বলেছিলেন কারবলার ঘটনার অনেক আগেই। এটা মুশা (আ.) -এর সুন্নাত। এই রোজার সাথে হাসেন হুসেন (রা.) -এর মৃত্যুর কোন সম্পর্ক নাই। আর যারা হাসান হুসেন (রা.) -এর মৃত্যু দিনকে শোক দিবস বলে পালন করেন তারা কি উমার, উসমান, আলী (রা.) এবং ইসলামের ইতিহাসের হাজারো শহীদদের মৃত্যু দিন গুলোকেও শোক দিবস বলে পালন করেন?! সাবধান হোন! ইসলামে তিন দিনের বেশি শোক পালন নিষিদ্ধ। কারবলা এবং বানোয়াটি মহরমের নামে যতকিছু করা হয় তার সবই শিয়াদের সৃষ্টি। শিয়ারা ইসলাম থেকে বেড়িয়ে যাওয়া এক দল। যাদের বৈশিষ্ট্যই হল ধর্মে নতুন কিছু সৃষ্টি করা, বাড়াবাড়ি করা এবং মানুষকে বিভ্রান্ত করা।

✿ মহরম একটা হিজরি মাসের নাম। এছাড়া মহরম নামে ইসলামে আর কিছুই নাই।

✿ বুড়ো বয়সে সন্তানদের বাবা-মাকে না দেখার ঘটনা গুলো এমন পর্যায়ে চলেগেছে যে, কেউ যদি বুড়ো বাবা-মায়ের একটু খেয়াল রাখছে সে আমাদের সমাজে একজন চর্চিত ভালো মানুষ হয়ে যাচ্ছে। সবাই যেন অবাক হয়ে যাচ্ছে! ভালো কাজ আর ভালো মানুষের সংজ্ঞা এতটাই বদলে গেছে যে, নিজ জন্মদাতা বাবা-মায়ের সেবা করাটাও এখন ভালো কাজ! অথচ এটা এমন একটা দায়িত্ব যেখানে করা বা না করার কোন অপ্সান নাই। বাবা-মায়ের সেবা যত্ন করতেই হবে। এটা মানুষের স্বভাবজাত হওয়া উচিত। বাবা মা লাখ ভুল করলেও, লাখ অন্যায় করলেও তারা সম্মান, ভালোবাসা, যত্ন পাওয়ার অধিকারী। তাদের কোন ব্যবহারেই বিরক্ত হয়ে উফঃ পর্যন্ত করা যাবে না। আমাদের সমাজে বৃদ্ধ বাবা মায়ের অবস্থা দিন দিন অনেক অনেক করুণ পরিস্থিতির দিকে যাচ্ছে। ধর্মীয় নৈতিকতা, মুল্যবোধ এবং সর্বশক্তিমান আল্লাহর কাছে জবাবদিহিতার ভয় না থাকলে সমাজ থেকে এসব ক্যানসার দূর করা সম্ভবও না। তাই বাবা মায়েদের উচিত এসব ব্যাপারে যত্নশীল হওয়া।

✿ মহান আল্লাহ বলেন -❝তাকে যে সংবাদ দেওয়া হয় (কন্যা সন্তান জন্মের ব্যাপারে), তার গ্লানি হেতু সে নিজ সম্প্রদায় হতে আত্মগোপন করে; সে চিন্তা করে যে, হীনতা সত্ত্বেও সে তাকে রেখে দেবে না মাটিতে পুঁতে দেবে। সাবধান! তারা যা সিদ্ধান্ত করে তা কতই না নিকৃষ্ট।❞ [সুরা নাহল/৫৯]
বিশ্বনবী (সা.) বলেন -
❝যার গৃহে কন্যা সন্তান জন্ম গ্রহন করল, অতঃপর সে তাকে (কন্যাকে) কষ্টও দেয়নি, তার উপর অসন্তুষ্টও হয়নি এবং পুত্র সন্তানকে প্রাধান্য দেয়নি, তাহলে ঐ কন্যার কারনে আল্লাহ তা'য়ালা তাকে বেহেশতে প্রবেশ করাবেন।❞ [মুসনাদে আহমদ, ১:২২৩]

✿ ইসলামে মানুষের সাথে উত্তম কথা বলা, উপদেশ দেওয়া, দেখে মুচকি হাসা, কারও সমালোচনা না করা ইত্যাদি হল ইবাদত।

✿ ইমাম আবদুল্লাহ ইবনে মুবারাকের (রাহিমাহুল্লাহ) প্রতিবেশী ছিলো একজন ইহুদি। ইমাম নিজের সন্তানদেরকে খাওয়ানোর পূর্বেই সর্বদা সে ইহুদিকে খাওয়াতেন এবং প্রথমে তাকে কাপড় দেয়ার পর সন্তানদের কাপড়-চোপড় দিতেন। এক সময় কিছু লোক ইহুদি লোকটিকে বলেছিলো, “আমাদের কাছে তোমার বাড়িটি বিক্রি করে দাও।” (যদিও বাড়িটির মুল্য এক হাজার দিনার কিন্তু ইহুদি) উত্তর দিয়েছিলো, “আমার বাড়ির দাম দু’হাজার দিনার, এক হাজার বাড়ির মূল্য এবং আরেক হাজার ইবনে মুবারাক প্রতিবেশী হবার কারণে।”

✿ ধর্ম যার যার, উৎসব যার যার কিন্তু শান্তি প্রতিষ্ঠার দায়িত্ব সবার। বর্তমানে আমাদের দেশের যা অবস্থা বিভিন্ন ধর্মের মানুষদের মধ্যে শান্তি ও সংহতি প্রতিষ্ঠা করাই সবথেকে বড় দেশপ্রেম। এটাই সবথেকে বড় দেশভক্তি। সেনারা যদি বাইরের শত্রু থেকে আমাদের রক্ষা করার দায়িত্ব পালন করে তবে আমাদেরও উচিত দেশের সাম্প্রদায়িক শত্রুগুলোর বিরুদ্ধে সংগ্রাম করে দেশের শান্তি শৃঙ্খলা রক্ষা করা। কারণ, ভারত সবসময় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, দুর্বল হয়েছে, বদনাম হয়েছে সাম্প্রদায়িক ঝামেলা গুলোর কারণেই! তাই সকল বাংলাবাসী শুভবুদ্ধিসম্পন্ন মানুষদের কাছে অনুরোধ করব নিজ নিজ অবস্থান থেকে অশান্তি সৃষ্টিকারীদের বিরুদ্ধে লড়াই করে যান এবং শান্তি প্রতিষ্ঠার ও ঐক্য তৈরির চেষ্টা করে জান। নিশ্চয় মানুষদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ তারাই যাদের সাথে অন্যরা সহজে মিশতে পারে এবং তারাও অন্যদের সাথে সহজে মিশতে পারে।

✿ আল্লাহর প্রথম সৃষ্টি 'কলম'। কুর'আনের প্রথম শব্দ 'পড়ো'। জ্ঞান অর্জন সকল মুসলিম নর ও নারীর জন্য 'অত্যাবশ্যকীয়'। একটু ভাবুন!!

✿ আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে লিখলে, এমনকি একটা হাদীস বা আয়াত শেয়ার করলেও মহাহিসাবের দিন তার প্রতিদান পেয়ে অবাক হয়ে যাবেন ইনশা'আল্লাহ। আর জনপ্রিয় হওয়ার জন্য এবং নিজেকে জ্ঞানী হিসাবে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য লিখলে শুধু 'লাইক' পেয়েই খুশি হতে হবে। সাথে মহাবিচার দিবসের বঞ্চিত হয়ে থাকতে হবে বিশাল পুরুস্কার থেকে!

✿ আজ থেকে সারে চৌদ্দশ বছর আগের কথা। যখন পরিবেশ দুষিত ছিল না। বায়ু বিষাক্ত ছিল না। গাছ গাছালির অভাব ছিল না। বন জঙ্গল কেটে বসতি বানানোর ঝামেলা ছিল না। ৭০০ কোটি মানুষ ছিল না তাই ফার্নিচার বানানোর জন্য খুব বেশি গাছ কাটার প্রয়োজনও ছিল না। মোটকথা, গাছ নিয়ে কোন সমস্যাই ছিল না। কিন্তু একটা লোক সেই সময় গাছ লাগানোর জন্য অনেক অনেক তাগিদ করেগেছেন। তিনি বলেছেন গাছ লাগানো চ্যারিটি! সেই গাছ থেকে পশু পাখি কিছু খেলে চ্যারিটি, কেউ ফুল ফুল চুরি করলেও চ্যারিটি, এমনকি কেউ সেই গাছের ছায়ায় আরাম করলে বা যেকোনভাবে উপকৃত হলে গাছ লাগানো ব্যক্তির পক্ষ থেকে তা চ্যারিটি!! শুধু তাই না, তিনি বলেছেন পৃথিবী ধ্বংশ হওয়ার মহুর্তেও যদি তোমাদের কারও হাতে চারা গাছ থাকে আর সে যদি তা লাগাতে সক্ষম হয় তবে যেন তা লাগিয়ে দেয়। তিনি আরো বলেছেন যে খামাখা গাছ কেটে ফেলে তার মাথাকে সর্বশক্তিমান ইশ্বর জাহান্নামের আগুনে ঢুকিয়ে দেবেন!আপনি কি জানেন সেই মানুষটা কে? তিনি হলেন পৃথিবীবাসীর জন্য রহমত, তিনি বিশ্বনবী মুহাম্মাদ (সা.)। এই মানুষটি সম্পর্কে যদি কারও জানতে আগ্রহ না হয় তবে তার জন্য আফসোস।

✿ তর্ক করে নয়, স্মরণ করিয়ে কাজ হয়!

Saturday 1 October 2016

ফেসবুক স্টেটাস - ১


 যদি সুখী হতে চান আপনার চারপাশের মানুষ জনের উপর সুধারণা রাখুন। হতে পারে তাদের অনেকে আপনার ব্যাপারে সুধারণা রাখেনা, আপনার সমালোচনা করে। তারপরেও আপনি পজিটিভ হোন। তাদের ব্যাপারে নেগেটিভ ভাবতে ভাবতে আপনি এক সময় সব মানুষকে খারাপ ভাবতে শুরু করবেন। ফলে আপনার মন থেকে শান্তি উড়ে যাবে। আপনি সবসময় উত্তেজিত থাকবেন প্রতিশোধের আগুনে। ফলে নিজে জ্বলবেন আর শুধু নিজেই জ্বলবেন। এর থেকে অনেক ভালো লোকেদের ব্যাপারে সুধারণা রাখা। তাদের খারাপ কাজ গুলোকে ভুলে ভালো কাজ গুলোকে মনে রাখা। শান্তিকামীদের জন্য এটাই শ্রেষ্ঠ পথ!

✒ ভাই, আনন্দে থাকতে চাইলে নিউজ চ্যানেল দেখা বন্ধ করুন। এতে আপনার মন মস্তিষ্ক, শরীর সব ভালো থাকবে। আর খবর জানার জন্য নিউজপেপার পড়ুন। এতেও আপনার জন্য ক্ষতিকর জিনিস থাকলেও নিউজ চ্যানেলের থেকে কম। আর একান্তই যদি নিউজ চ্যানেল দেখতেই হয় তবে NDTV INDIA দেখুন। বিশেষ করে রাভিশ কুমারের রিপোর্ট এবং টক শো গুলো। নিসন্দেহে ভারতের একমাত্র (তুলনামুলক) নিরপেক্ষ নিউজ চ্যানেল। আর রাভিশ কুমার তো সেরার সেরা!

✒ যে মুসলিম ভাইয়েরা মহরম, জালসা বা অন্য কারনে রাস্তা আটকে, রাস্তার এবং পথচারীদের হক নষ্ট করে চাঁদা আদায় করে, দোকানে দলবল নিয়ে জোরপুর্বক চাঁদা আদায় করে, ক্লাবের তরফ থেকে বিভিন্ন মানুষের উপর চাপ দিয়ে তোলা আদায় করে তারা সাবধান! বিশ্বনবী মুহাম্মাদ (সা.) আমাদের কঠোরভাবে সাবধান করেছেন। তিনি বলেছেন, ''নিশ্চয়ই চাঁদাবাজরা জাহান্নামে যাবে''। [আহমাদ, তাবারানী, সিলসিলাহ সহীহাহ/৩৪০৫]

✒ বর্তমান সমাজে বিশেষ করে গ্রাম গুলোতে মেয়েদের উপর যত অত্যাচার, অবিচার, নির্যাতন হয়; সেই হিসেবে আরো অনেক অনেক নারী সংগঠনের দরকার। একেকটা ঘটনা শুনে চোখের জল আটকে রাখা অসম্ভব হয়ে দাঁড়ায়। দুঃখ আর ভয়ংকর ব্যাপার হল ঘটনা গুলো মাঝে মাঝেই শুনি।

✒ বিপদ, দুঃখ, রোগ ব্যাধী গুলো দুনিয়াবী নজরে খুব খারাপ এবং অশান্তির। কিন্তু একজন প্রকৃত মুসলিমের জন্য তা আল্লাহর বিশাল রহমত। প্রত্যেক কষ্ট আসলে পাপমোচনকারী। আল্লাহর নিকটবর্তী হওয়ার একটা মাধ্যম। দুনিয়ার প্রত্যেক কষ্টের বিনিময় মহান আল্লাহ বিশ্বাসীদের এত এত দেবেন যে অনান্য লোকেরা আফসোস করে বলবে দুনিয়াতে আমাদের শরীর যদি কাঁচি দিয়ে কাঁটা হতো তবে কতই না ভালো হতো!

✒ জীবনে কষ্ট পাওয়াও জরুরি। সফলতার জন্য। আসে পাশের সফল ব্যক্তিত্বদের দেখলে আমরা এটাই শিক্ষা পায়। যারা সুখে থেকে প্রতিকূল পরিস্থিতিতে কাজ করেছে তাদের থেকে কষ্ট আর অপ্রতিকূল পরিস্থিতিতে কাজ করা লোকেরা বেশি সফল।

✒ যারা পাকিস্থানের সাথে যুদ্ধ করা নিয়ে লাফাচ্ছেন তারা কি নিজেরা যাবেন যুদ্ধের ময়দানে? সারা বিশ্বের শান্তিকামী লোকেরা 'যুদ্ধ নয়, শান্তি চাই' শ্লোগান দিচ্ছেন আর আমাদের দেশের কিছু সস্তা দেশভক্ত যুদ্ধের জন্য শ্লোগান তুলছেন। তারা কি খেয়াল করেনা, যুদ্ধ মানে কত প্রানের মৃত্যু, কত মায়ের সন্তানশোক, কত স্ত্রীর স্বামী হারানো, কত বাচ্চার অনাথ হওয়া। তারা কি ভেবে দেখেনা, আমাদের মতো উন্নয়নশীল দেশের জন্য যুদ্ধ কতটা ভয়ংকর, কত হাজার কোটি টাকার লস, জিনিস পত্রের দাম বৃদ্ধি ইত্যাদি। এত দেশভক্তি ফেসবুক টুইটারে কেন? আর্মিতে যোগ দিতে কে বাঁধা দিচ্ছে আপনাদের?!

✒ ইন্ডিয়া আমার দেশ। ইন্ডিয়া আমার জন্মভূমি। একজন ভারতীয় হিসেবে তো বটেই, একজন মুসলিম হিসেবেও আমি এই দেশকে ভালোবাসি। কারন, একজন মুসলিম হিসেবে আমি তাকদ্বীরে বিশ্বাসী। আর আমার তাকদ্বীরে এটাই ছিল যে আমি ভারতে জন্মগ্রহণ করি। অর্থাৎ আল্লাহ আমার জন্য চেয়েছেন আমি একজন ভারতীয় হই। আল্লাহ চাননি আমি বাংলাদেশী, নেপালী বা ব্রিটিশ হই। নিজের জন্মভুমির প্রতি ভালোবাসা আর অন্ধ জাতীয়তাবাদ এক নয়। আমি যেহেতু আমার দেশকে ভালোবাসি তাই ইন্ডিয়াকে 'রেন্ডিয়া' বলাদের প্রতি ঘৃণা আসবেই। ফেসবুকে সেই ঘৃণার প্রকাশ ঘটবে আন ফ্রেন্ড করার মাধ্যমে। নিজের দেশের প্রতি অন্য দেশের নাগরিকদের কাছে যে সম্মানটুকু চান সেটা আগে নিজেও দেওয়ার চেষ্টা করুন। বাংলাদেশকে বেশ্যারদেশ বলায় যেমন দেশভক্তি প্রকাশ পায় না, তেমনি ইন্ডিয়াকে রেন্ডিয়া বলাতেও পায় না।

✒ পাক-বাংলাদেশকে ভারত থেকে আলাদা করা যদি কোন ভুল না হয়ে থাকে তবে কাশ্মীরকে আলাদা করাও কোন ভুল হবেনা। আমরা যে কোন মুল্যে কাশ্মীরে শান্তি চাই। কাশ্মীরে ভারতে রেখে অথবা আজাদ করে। যদি ভারতে রেখে শান্তি সম্ভব না হয় তবে আজাদ করেই হোক। সেনা আর বুলেটের ভয়ে কি এক কোটি মানুষকে গুলাম বানিয়ে রাখা সম্ভব?! আমরা একটা কাশ্মিরিরও মৃত্যু চাই না। আমরা একটাও সেনাদের মৃত্যু চাই না। আমরা একটা বাচ্চাকেও অনাথ দেখতে চাই না। এবার আলাদা করে একটু ভাবা হোক। নতুন জানালা খোলা হোক। বাস্তব সমাধান খোঁজার চেষ্টা করা হোক। অনেকেই হয়ত সস্তা দেশভক্তি দেখিয়ে বলবেন কাশ্মীর নাহি ছোড়েঙ্গে ইত্যাদি। কিন্তু আপনারা কি এভাবেই বছরের পর বছর খুন খারাপি, অশান্তি আর কোটি কোটি টাকার অপচয় দেখতে চান? আর কত বছর লাগবে? কত সেনাকে শহীদ হতে লাগবে? কত কাশ্মীরিকে হত্যা করতে হবে? তারপর আসবে শান্তি! নাকি কাশ্মীরে শান্তি আসবেইই না কখনও। মানবতা কি ঠুকরে ঠুকরে কাদবে কাশ্মীরে!



Tuesday 27 September 2016

ইসলাম কেন আলাদা ? মনীষীদের মতামত...



পৃথিবীর একমাত্র ধর্ম ইসলাম যা পরিস্কারভাবে বলে দেয় যদি কোন মুসলিম কুর’আনের কোন বিধান বা কোন আয়াতকে অমান্য করে এমনকি সন্দেহপ্রকাশ করে তবে সে ইসলাম থেকে খারিজ হয়ে যায়। মানে সে আর মুসলিম থাকেনা। অন্য কোন ধর্মেই এমন কথা বলা হয়নি। আর পৃথিবীতে যত ধার্মীক আছে তাদের মধ্যে কেবল মুসলিমরাই এমন যারা কুরানের ব্যাপারে না সন্দেহ করে না কোন আয়াতকে অমান্য করে। বাকী অন্য ধর্মের যতই ধার্মীক বা ধর্মগুরু হোক না কেন সে স্বীকার করতে বাধ্য যে ধর্মগ্রন্থের সবু্কিছু সত্য নয়, সবকিছু সম্ভব নয়, অনেক ভুল আছে। ইসলাম নিয়ে সারা বিশ্বে যত সমালোচনা হয়েছে তার থেকে কয়েক গুন বেশি প্রশংসা হয়েছে। কিন্তু কিচ্ছু ইসলাম বিদ্বেষী শুধু সমালোচনা গুলোকেই প্রচার করে বেড়ায়, পৃথিবীর কত সাহিত্যিক, খেলোয়ার, বিজ্ঞানী, ঐতিহাসিক ইসলামের প্রসংসা করেছে সেসব দেখেও এরা চোখ বন্ধ করে নেই। ভারতে অরুন সৌরি নামেও একজন উগ্র আর.এস.এস কর্মী ইসলামের বিরুদ্ধে বই লিখেছিল। জাকির নাইক যাকে সারা বিশ্বের সামনে নগ্ন করে দিয়েছে যাই হোক, এই আর.এস.এস বা বিজেপি কিন্তু স্বামী বিবেকানন্দকেই তাদের আদর্শ মনে করে। এরা ইসলাম এবং মুসলিম বিদ্বেষী। ভারত থেকে মুসলিমদের তাড়াতে পারলেই এদের শান্তি অথচ স্বামীজি ইসলাম এবং মুসলিমদের সমন্ধে বলেছেন –‘দেখা যাবে ইসলাম যেথায় গিয়েছে সেথায় আদিম নিবাসীদের রক্ষা করেছে। সেসব জাত সেথায় বর্তমান। তাদের ভাষা জাতীয়তা আজও বর্তমান’। [প্রাচ্য ও পাশ্চাত্য/১১৮ পৃষ্ঠা]


মহাত্মা গান্ধী বলেছেন –

‘মুহাম্মাদ (সা) ছিলেন একজন মহান পয়গম্বর। তিনি সাহসী ছিলেন এবং আল্লাহকে ছাড়া কাউকে ভয় করতেন না। তিনি কখনও এক কথা বলে অন্য কাজ করতেন না। এই পয়গম্বর ছিলেন ফকিরের মতো। তিনি যদি ইচ্ছা করতেন তাহলে প্রচুর সম্পদ করতে পারতেন। আমি যখন তাঁর দুঃখের কাহিনী পড়ি তখন আমার চোখ দিয়ে কান্না ঝরে পড়ে। তিনি, তাঁর পরিবারবর্গ এবং তাঁর সঙ্গীরা কতই না কষ্ট ভোগ করেছিলেন স্বেচ্ছায়। তাই আমার মতো একজন সত্যাগ্রহী তাঁর মতো মানুষকে শ্রদ্ধা না করে থাকতে পারে না। যিনি তাঁর মনকে নিবদ্ধ রেখেছিলেন এক আল্লাহর প্রতি এবং তিনি চিরকাল হেঁটেছেন আল্লাহ ভীরুতার পথে। মানব জাতির প্রতি তাঁর সহানুভূতি ছিল সীমাহীন। (Islam and its holy prophet as judged by the Non Muslim world; page- 20)


ঐতিহাসিক ড. তারাচাঁদ বলেছেন – 

‘অমুসলিমদের উচিত গরিব, পদদলিত এবং অনাথদের বন্ধু চিরসত্যবাদী মুহাম্মাদ (সা) সম্পর্কে আরো ভালোভাবে জানা। মুহাম্মাদ (সা) ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করেছিলেন আরাম ও সুখের জীবন। তিনি কঠোর পরিশ্রম করতেন। নিজের পোষাক ও জুতো নিজ হাতে সেলাই করতেন। তিনি তাঁর শত্রুদের ক্ষমা করেছিলেন, দয়া দেখিয়েছিলেন ক্রীতদাসদের প্রতি। তিনি যেমন সাহসী ও অকুতোভয় ছিলেন, তেমনি ছিলেন ভদ্র ও অমায়িক। আমরা অবশ্যই স্বীকার করব যে ইসলামের বিস্তার তলোয়ার দিয়ে রাজ্যজয়ের মাধ্যমে হয়নি, ইসলামের বিস্তার হয়েছে তাঁর ব্যাক্তিত্বের জাদুতে এবং তাঁর আশ্চর্য বাগ্মীতার প্রভাবে। (Islam and its holy prophet as judged by the Non Muslim world; page- 240)


সি.পি. রামস্বামী লিখেছেন –
‘ইসলাম বলতে কি বোঝায় ? আমি মনে করি এবং বিশ্বের সমস্ত চিন্তাশীল ব্যক্তিও এটা স্বীকার করেন যে বিশ্বের এক এবং একমাত্র সত্যিকারের গণতান্ত্রিক ধর্ম ইসলাম যা আজ প্রকৃতপক্ষে কাজ করে চলেছে এই বিশ্বে। একজন হিন্দু হয়ে এবং হিন্দু বিশ্বাসের মধ্যে দৃঢ় ভাবে বেষ্টিত হয়েও আমি অত্যন্ত স্পষ্ট ভাবে এ কথা বলছি । (The Eastern times; 22 desember; 1944)


আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র রায় বলেছেন –
‘জগতের বুকে ইসলাম সর্বোতকৃষ্ট গণতন্ত্রমুলক ধর্ম। প্রশান্ত মহাসাগর হইতে আরম্ভ করিয়া আটলান্টিক মহাসাগরের উপকূল পর্যন্ত সমস্ত মানবমন্ডলীকে উদারনীতির একসূত্রে আবদ্ধ করিয়া ইসল্ম পার্থিব উন্নতির চরম উতকর্ষ লাভ করিয়াছে।


পন্ডিত জহরলাল নেহেরু লিখেছেন –
‘হযরত মহম্মদের প্রচারিত ধর্ম, এর সরলতা, ন্যায়নিষ্ঠা এবং এর বৈপ্লবিক গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা, সমতা ও ন্যায়নীতি পার্শ্ববর্তী রাজ্যের লোকেদের অনুপ্রাণীত করে। কারণ ঐ সমস্ত রাজ্যের জণসাধারনের দীর্ঘদিন যাবত একদিকে শাসক গোষ্টী কর্তৃক নিপীড়িত, শোষিত ও নির্যাতিত হচ্ছিল, অপর দিকে ধর্মীয় ব্যাপারে নির্যাতিত নিষ্পেষিত হচ্ছিল পোপদের হাতে…. তাদের কাছে এ নতুন ব্যবস্থা ছিল মুক্তির দিশারী।


রবীঠকুর লিখেছেন –
“মুহাম্মাদের আবির্ভাব কালে পৌত্তলিক আরবীয়রা যে তাঁহার একেশ্বরবাদ সহজে গ্রহণ করিয়াছিলে তাহা নহে, তাই বলিয়া তিনি তাহাদিগকে ডাকিয়া বলেন নাই, তোমাদের জন্য যাহা সহজ তাহাই তোমাদের ধর্ম, তোমরা বাপ দাদা ধরিয়া যাহা মানিয়া আসিয়াছে তাহাই তোমাদের সত্য। তিনি এমন অদ্ভুত অসত্য বলেন নাই যে, যাহাকে দশ জন মিলিয়া বিশ্বাস করা যায় তাহাই সত্য, যাহাকে দশ জন মিলিয়া পালন করা যায় তাহাই ধর্ম। একথা বলিলে উপস্থিত আপদ মিটিত কিন্তু চিরকালের বিপদ বাড়িয়া চলিত”। (গ্রন্থঃ সঞ্চয়; প্রবন্ধঃ ধর্মের অধিকার)


শেষে বলব, ইসলামের উপর যতই অত্যাচার হোক ইসলাম পৃথিবী থেকে কখনোই মুছে যাবেনা। সারা বিশ্বকেই একদিন ইসলামের পতাকাতলে আসতে হবে, আসতেই হবে। শাইখ আবদুল আজিজ বিন বায (রহ.) খুব চমৎকার একটি কথা বলেছিলেন, “ইসলাম পৃথিবীর বুকে সূর্যের মতন যা কখনো পুরোপুরি হারিয়ে যায় না। যদি কোন স্থানে সে অস্তমিত হয়, অন্য আরেকটি স্থান আলোকিত করে জেগে উঠে।”

মুহাম্মাদ (সা.) মানবতার মুক্তির দিশারী


পৃথিবীতে যে ব্যক্তিত্বকে নিয়ে সবথেকে আলোচনা সমালোচনা হয়েছে তিনি নিসন্দেহে মুহাম্মাদ সা. পৃথিবীর অনেক বিখ্যাত লেখক, খেলোয়ার, সাংবাদীক, রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব, ইতিহাসবীদ, বিজ্ঞানীরা তাঁকে নিয়ে অনেক লেখালেখি, আলোচনা-সমালোচনা করেছেন। অনেকেই তাঁর প্রশংসা করেছেন আবার অনেক লোক সস্তা পাবলিসিটির জন্য তাঁর সমালোচনাও করেছেন। একথা বলছি কারণ ব্লগিং করতে গিয়ে দেখেছি ভাষাজ্ঞান নেই এমন ব্লগারও ইসলামের বিরুদ্ধে লিখে ফেমাস ব্লগার হয়েছে। তবে সলমান রুশদি, আরুন সৌরি, তসলিমা নাসরিনের মতো তৃতীয় শ্রেনীর লেখক বা পরিচালকরা যতই বই লিখে বা ছবি বানিয়ে মুহাম্মাদের (সা.) চরিত্রকে কলংকিত করার চেষ্টা করুক তারা তাদের উদ্দেশ্যে কখনো সফল হবেনা। কারণ সত্য সবসময় মিথ্যার উপর বিজয় লাভ করে। আল্লাহ বলেছেন – ‘বলো, সত্য এসেছে মিথ্যা মুছে গেছে, মিথ্যা তো মুছে যাবার জন্যই’। আজ মুহাম্মাদ সা. সম্পর্কে পৃথিবীর বিখ্যাত মনীষিদের মতামত জানাবো আপনাদের। তসলিমা, রুশদিরা সস্তা পাবলিসিটির জন্যই ইসলামের বিরুদ্ধে লেখে। কিন্তু এরা কোন স্বার্থে ইসলামের প্রশংসা করেছে ?

◆ জর্জ বার্নাড শ’ লিখেছেন☛   আমি তাঁর(মুহাম্মদ) সম্বন্ধে পড়াশোনা করেছি – চমৎকার একজন মানুষ এবং আমার মতে খ্রিস্টবিরোধী হওয়া সত্বেও তাঁকে অবশ্যই মানবতার ত্রাণকর্তা বলতে হবে। আমি বিশ্বাস করি তাঁর মতো ব্যক্তির নিকট যদি আধুনিক বিশ্বের একনায়কতন্ত্র অর্পণ করা হতো তবে এর সমস্যাগুলো তিনি এমনভাবে সফলতার সাথে সমাধান করতেন যা বহু প্রতিক্ষীত শান্তি ও সুখ আনয়ন করতো। আমি ভবিষ্যতবাণী করছি যে মুহাম্মদের ধর্মবিশ্বাস আগামীদিনের ইউরোপের কাছে গ্রহণযোগ্য হবে, যা ইতিমধ্যে বর্তমান ইউরোপে গ্রহণযোগ্যতা পেতে আরম্ভ করেছে। [‘The Genuine Islam,’ Vol. 1, No. 8, 1936]

◆ থমাস কার্লাইল লিখেছেন ☛  এ লোকটিকে (মুহাম্মদ) ঘিরে যে মিথ্যাগুলো (পশ্চিমা অপবাদ) পূন্জীভূত হয়ে আছে- যার ভালো অর্থ হতে পারে ধর্মান্ধতা, তা আমাদের নিজেদের জন্যই লজ্জাজনক। [ ‘Heroes and Hero Worship and the Heroic in History,’ 1840]

◆ মহাত্মা গান্ধী লিখেছেন ☛  আমি জীবনগুলোর মধ্যে সেরা একজনের জীবন সম্পর্কে জানতে চেয়েছিলাম যিনি আজ লক্ষ কোটি মানুষের হৃদয়ে অবিতর্কিতভাবে স্থান নিয়ে আছেন…….যেকোন সময়ের চেয়ে আমি বেশী নিশ্চিত যে ইসলাম তরবারির মাধ্যমে সেইসব দিনগুলোতে মানুষের জীবন-ধারণ পদ্ধতিতে স্থান করে নেয়নি। ইসলামের প্রসারের কারণ হিসেবে কাজ করেছে নবীর দৃঢ় সরলতা, নিজেকে মূল্যহীন প্রতিভাত করা, ভবিষ্যতের ব্যাপারে সতর্ক ভাবনা, বন্ধু ও অনুসারীদের জন্য নিজেকে চরমভাবে উৎসর্গ করা, তাঁর অটল সাহস, ভয়হীনতা, ঈশ্বর এবং তাঁর(নবীর) ওপর অর্পিত দায়িত্বে অসীম বিশ্বাস। এ সব-ই মুসলমানদেরকে সকল বাঁধা কাটিয়ে উঠতে সাহায্য করেছে। যখন আমি মুহাম্মদের জীবনীর ২য় খন্ড বন্ধ করলাম তখন আমি খুব দু:খিত ছিলাম যে এই মহান মানুষটি সম্পর্কে আমার পড়ার আর কিছু বাকি থাকলো না। [‘Young India,’1924]

◆ ড. উইলিয়াম ড্রাপার লিখেছেন ☛  জাস্টিনিয়ানের মৃত্যুর চার বছর পর, ৫৬৯ খ্রিস্টাব্দে আরবে একজন মানুষ জন্মগ্রহণ করেন যিনি সকলের চাইতে মানবজাতির ওপর সবচেয়ে বেশি প্রভাব বিস্তার করেছিলেন….অনেক সাম্রাজ্যের ধর্মীয় প্রধান হওয়া, মানবজাতির এক তৃতীয়াংশের প্রাত্যহিক জীবনের পথনির্দেশক হিসেবে কাজ করা– এসবকিছুই সৃষ্টিকর্তার দূত হিসেবে তাঁর উপাধির যথার্থতা প্রমাণ করে। [History of Intellectual Development of Europe]

◆ Alphonse de LaMartaine লিখেছেন ☛  উদ্দেশ্যের মহত্ব, লক্ষ্য অর্জনের উপায়সমূহের ক্ষুদ্রতা এবং আশ্চর্যজনক ফলাফল যদি অসাধারণ মানুষের তিনটি বৈশিষ্ট্য হয় তবে কে মুহাম্মদের সাথে ইতিহাসের অন্য কোন মহামানবের তুলনা করতে সাহস করবে ? বেশীরভাগ বিখ্যাত ব্যক্তি শুধুমাত্র সেনাবাহিনী, আইন এবং সাম্রাজ্য তৈরী করেছেন। তাঁরা যদি কিছু প্রতিষ্ঠা করে থাকেন সেটা কিছুতেই জাগতিক ক্ষমতার চাইতে বেশি কিছু নয় যা প্রায়ই তাদের চোখের সামনে ছিন্ন-বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। এই মানুষটি শুধুমাত্র সেনাবাহিনী, আইন, সাম্রাজ্য, শাসক, লোকবল-ই পরিচালনা করেননি সেইসাথে তৎকালীন বিশ্বের লক্ষ-লক্ষ মানুষের জীবনকে আন্দোলিত করেছিলেন; সবচেয়ে বড় কথা হলো তিনি দেব-দেবী, ধর্মসমূহ, ধারণাগুলো, বিশ্বাসসমূহ এবং আত্মাগুলোকে আন্দোলিত করেছিলেন। দার্শনিক, বাগ্মী, বার্তাবাহক, আইনপ্রণেতা, নতুন ধারণার উদ্ভাবনকারী/ধারণাকে বাস্তবে রূপদানকারী, বাস্তব বিশ্বাসের পুনরুদ্ধারকারী…..বিশটি জাগতিক এবং একটি আধ্যাত্মিক সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠাতা-এই হলো মুহাম্মদ। মানুষের শ্রেষ্ঠত্ব পরিমাপের যত মাপকাঠি আছে তার ভিত্তিতে বিবেচনা করলে আমরা নিজেদেরকে প্রশ্ন করতে পারি- মুহাম্মদের চেয়ে শ্রেষ্ঠ কেউ আছে কি ? [Historie de la Turquie,’ Paris, 1854]

◆ মাইকেল এইচ. হার্ট লিখেছেন ☛  মুহাম্মদকে সর্বকালের সবচেয়ে প্রভাবশালী ব্যক্তিদের তালিকায় শীর্ষস্থান দেয়াটা অনেক পাঠককে আশ্চর্যান্বিত করতে পারে এবং অন্যদের মনে প্রশ্নের উদ্রেক হতে পারে, কিন্তু ইতিহাসে তিনিই একমাত্র ব্যক্তি যিনি সেকুলার এবং ধর্মীয় উভয় পর্যায়ে সর্বোচ্চ পরিমাণ সফল ছিলেন। সম্ভবত ইসলামের ওপর মুহাম্মদের তুলনামূলক প্রভাব খ্রিস্টান ধর্মের ওপর যীশু ও সেইন্ট পলের সম্মিলিত প্রভাবের চেয়ে বেশী।…. আমি মনে করি, ধর্মীয় ও সেকুলার উভয়ক্ষেত্রে প্রভাবের এই বিরল সমন্বয় যোগ্য ব্যাক্তি হিসেবেই মুহাম্মদকে মানবেতিহাসের সবচেয়ে প্রভাবশালী একক ব্যক্তিত্ব হিসেবে আবির্ভুত করেছে। [The 100, A Ranking of the Most Influential Persons In History,’ New York, 1978]

◆ W. Montgomery Watt লিখেছেন ☛  নিজ আদর্শ প্রতিষ্ঠার জন্য সকল প্রকার কষ্ট সহ্য করা, তাঁকে যারা বিশ্বাস করতো এবং নেতা হিসেবে অনুসরণ করতো তাদের সুউচ্চ চারিত্রিক গুণাবলি, এবং মুহাম্মদের অর্জনের বিশালত্ব- এ সবকিছুই তাঁর সততার সাক্ষ্য দেয়। মনে করা হয় মুহাম্মদ একজন অসাধু ব্যাক্তি যিনি সমাধানের চেয়ে সমস্যাই বেশী সৃষ্টি করেছেন। অধিকন্তু, আর কোন ঐতিহাসিক ব্যক্তিত্বই মুহাম্মদের মতো পাশ্চাত্যে এতবেশী অবমূল্যায়িত হয়নি……শুধুমাত্র যা বর্ণিত হয়েছে তার ভিত্তিতে নয়, আমরা যদি মুহাম্মদকে সামান্য পরিমাণও বুঝতে চাই তবে অবশ্যই প্রয়োজনীয় সততা ও ন্যায়পরায়ণতা সহকারে তাঁকে বিচার করতে হবে। আমরা যদি আমাদের অতীত থেকে উত্তরাধিকারসূত্রে প্রাপ্ত ভূলগুলো সংশোধন করতে চাই তবে এটা ভূলে গেলে চলবে না যে চুড়ান্ত প্রমাণ আপাতদৃষ্টিতে যা সত্য বলে প্রতীয়মান হয় তারচেয়ে অনেক কঠিন শর্ত। এবং এই ব্যাপারে প্রমাণ অর্জন সত্যিই দু:সাধ্য হবে। [‘Muhammad at Mecca,’ Oxford, 1953]

◆ গিবন লিখেছেন ☛  মুহাম্মদের মহত্বের ধারণা আড়ম্বড়পূর্ণ রাজকীয়তার ধারণাকে অস্বীকার করেছে। স্রষ্টার বার্তাবাহক পারিবারিক গৃহকর্মে নিবেদিত ছিলেন; তিনি আগুন জ্বালাতেন; ঘর ঝাড়ু দিতেন; ভেড়ার দুধ দোয়াতেন; এবং নিজ হাতে নিজের জুতা ও পোষাক মেরামত করতেন। পাপের প্রায়শ্চিত্তের ধারণা ও বৈরাগ্যবাদকে তিনি অস্বীকার করেছেন। তাঁকে কখনো অযথা দম্ভ প্রকাশ করতে দেখা যায়নি, একজন আরবের সাধারণ খাদ্যই ছিলো তাঁর আহার্য। [The Decline and Fall of the Roman Empire’ 1823]

◆ Lane-Poole লিখেছেন ☛  তিনি যাদেরকে আশ্রয় দিতেন তাদের জন্য ছিলেন সবচেয়ে বিশ্বস্ত রক্ষাকারী, কথাবার্তায় ছিলেন অত্যন্ত মিষ্টভাষী ও নম্র। তাঁকে যারা দেখত তারা শ্রদ্ধায় পূর্ণ হতো; যারাই তাঁর কাছে এসেছিল তাঁকে ভালবেসেছিল; যারা তাঁর সম্বন্ধে বর্ণনা দিত তারা বলতো, ” তাঁর মতো মানুষ আগে বা পরে আমি কখনো দেখিনি।” তিনি ছিলেন অতি স্বল্পভাষী, কিন্তু যখন তিনি কথা বলতেন জোরের সাথে এবং সুচিন্তিতভাবে কথা বলতেন। এবং তিনি যা বলতেন তা কেউ ভুলতে পারতো না। [Speeches and Table Talk of the Prophet Muhammad]

◆ Jules Masserman লিখেছেন ☛  নেতাদের অবশ্যই তিনধরনের কাজ সম্পাদন করতে হয়- অনুসারীদের মংগলের ব্যবস্থা করা, এমন একটি সামাজিক প্রতিষ্ঠানের সৃষ্টি করা যেটাতে সাধারণ লোকজন তুলনামূলকভাবে নিরাপত্তা বোধ করে, এবং অনুসারীদের জন্য একটি পূর্ণাংগ বিশ্বাসের যোগান দেয়া। প্রথমটি বিবেচনায় নেতা হলেন লুই পাস্তুর এবং সাল্ক( Salk)। দ্বিতীয় এবং তৃতীয় বৈশিষ্ট্য বিবেচনায় একদিকে গান্ধী ও কনফুসিয়াস এবং অন্যদিকে আলেকজান্ডার, সীজার ও হিটলার- এরা হলেন নেতা। যীশুখ্রিস্ট ও গৌতম বুদ্ধ তৃতীয়টি বিবেচনায় নেতা। সম্ভবত মুহাম্মদ হলেন সর্বকালের শ্রেষ্ঠ নেতা যিনি ওপরোক্ত তিনটি কার্যাবলীই সম্পাদন করেছেন। স্বল্প পরিসরে হলেও মুসাও একই কাজ করেছিলেন। [Who Were Histories Great Leaders?’ in TIME Magazine, July 15, 1974]

◆ W.C. Taylor লিখেছেন ☛  দরিদ্র লোকদের প্রতি তাঁর সদয়তা এত বেশী ছিল যে প্রায়ই পরিবার-পরিজনকে উপবাস করতে হতো। তিনি শুধু তাদের অভাব মোচন করেই তৃপ্ত হতেন না, তাদের সাথে কথা-বার্তা বলতেন এবং তাদের দু:খ-দুর্দশার জন্য গভীর সহানুভূতি প্রকাশ করতেন। তিনি ছিলেন ঘনিষ্ট বন্ধু এবং বিশ্বস্ত সহযোগী। [The History of Muhammadanism and its Sects]

◆ Reverend Bosworth Smith লিখেছেন ☛  রাষ্ট্রপ্রধান একইসাথে উপাসনাগৃহের প্রধান, তিনি ছিলেন একই সাথে সীজার এবং পোপ; তিনি পোপ ছিলেন কিন্তু পোপের দুরহংকার ছাড়া, তিনি সীজার ছিলেন কিন্তু সীজারের মতো বিরাট সেনাবাহিনী ছাড়া, দেহরক্ষী ছাড়া, শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনী ছাড়া, স্থায়ী কোন ভাতা ছাড়া। যদি আজ পর্যন্ত কোন মানুষ ন্যায়বিচারপূর্ণ স্বর্গীয় শাসন করে থাকে, তবে সেটা ছিলেন মুহাম্মদ। [Muhammad and Muhammadanism,’ London, 1874]

◆ Dr. Gustav Weil লিখেছেন ☛  মুহাম্মদ ছিলেন তাঁর অনুসারীদের জন্য জাজ্বল্যমান দৃষ্টান্ত। তাঁর চরিত্র ছিল নিষ্কলুষ এবং দৃঢ়। তাঁর গৃহ, পোষাক, খাদ্য- সবই ছিল অতি সাধারণ। তিনি এতই নিরহংকার ছিলেন যে তাঁর সংগীদের কাছ থেকে বিশেষ কোন সম্মান গ্রহণ করতেন না কিংবা যে কাজ তিনি নিজে করতে পারতেন তাঁর জন্য অযথা ভৃত্যের সাহায্য নিতেন না। সবসময় সবার জন্য তাঁর দ্বার ছিল উন্মুক্ত ছিল। তিনি অসুস্থ ব্যক্তিকে দেখতে যেতেন এবং সবার প্রতি তাঁর অপরিসীম সহানুভূতি ছিল। তাঁর বদান্যতা ও মহানুভবতা ছিলো অসীম, সেইসাথে তিনি সবসময় অনুসরীদের মংগলের কথা চিন্তা করতেন। [‘History of the Islamic Peoples’]

◆ J.W.H. Stab লিখেছেন ☛  তাঁর কাজের সীমা এবং স্থায়িত্ব বিবেচনা করলে শুধু মক্কার নবী হিসেবে নয় পৃথিবীর ইতিহাসে তিনি আরও দীপ্তিময়ভাবে জ্বলজ্বল করছেন। …..মানুষের বিখ্যাত হওয়ার মাপকাঠি অনুসারে বিচার করলে তাঁর সাথে অন্য কোন মরণশীলের খ্যাতি তুলনীয় হতে পারে কি ? [Islam and its Founder]

◆ Washington Irving লিখেছেন ☛  মুহাম্মদের সামরিক বিজয় তাঁর মাঝে কোন গর্ব ও অযথা দম্ভ জাগায়নি। প্রতিকূল দিনগুলোতে তাঁর আচার-ব্যবহার ও পোষাক-আশাক যেরকম সাধারণ ছিলো সর্বোচ্চ ক্ষমতার অধিকারী হওয়ার পরও তা তিনি বজায় রেখেছিলে। রাজকীয় জাঁকজমক দূরে থাক, এমনকি কক্ষে ঢোকার পর তাঁর প্রতি কেউ বিশেষভাবে সম্মান প্রদর্শন করলে তিনি রেগে যেতেন। তিনি ছিলেন সাধারণ মানুষের ভালোবাসার পাত্র কারণ সবাইকেই তিনি আতিথেয়তার সাথে গ্রহণ করতেন এবং মনোযোগ সহকারে তাদের অভিযোগ শুনতেন। ব্যক্তিগত লেন-দেনের ক্ষেত্রে ছিলেন ন্যায়পরায়ণ । বন্ধু-আগন্তুক, ধনী-দরিদ্র, সবল-দুর্বল সবার সাথে সমতার সাথে ব্যবহার করতেন। [‘Life of Muhammad,’ New York,1920]

এরকম হাজারো উদাহরণ দেওয়া যেতে পারে। এঁরা কোন স্বার্থসিদ্ধির জন্য নয় বরং ইসলাম ও মুহাম্মাদের (সা.) সৌন্দর্য এবং চরিত্রে মুগ্ধ হয়েই লিখেছিলেন। তসলিমা নাসরিন কিংবা সলমান রুশদির অনান্য লেখা গুলো পর্যালোচনা করলে দেখা যাবে তাদের লেখার মান খুব নিন্মমানের। এমন আহামরী কিছু নয় যে এতটা জনপ্রিয়তা পাবে। শুধু ইসলামের বিরুদ্ধে লেখার জন্যই আজ তারা পরিচিত। যারা একথা বিশ্বাস করেন না তাদের কাছে একটা প্রশ্ন, সারা বিশ্বে হুমায়ন আহমেদ বেশি পরিচিত নাকি তসলিমা নাসরিন? আল্বাত তসলিমা নাসরিন। যারা সাহিত্যের ‘স’ ও পড়েনা তাড়াও তসলিমাকে চেনে। এর একমাত্র কারণ ইসলামের বিরুদ্ধে লেখা। নিজের প্রতিভা বা লেখনি ক্ষমতার জন্য নয়। হুমায়ন স্যারের পায়ের ধুলোর বরাবরও কি তসলিমা নাসরিন?

Wednesday 14 September 2016

কন্যা হত্যা এবং ইসলাম

– ‘এখনই বাচ্চা নিতে চাইছিনা

– ‘প্রথম বাচ্চা তো সবে দের বছর হল..

– ‘খাওয়াবো কীথাকবে কোথায়?

– ‘শুধু খাওয়ালেই হয়নামানুষও করতে হবে

– ‘মেয়ের বিয়ে দেওয়ার মত টাকা কোথায় পাবো

 এরকম হাজারও বাহানায় ভ্রুণ হত্যা করা সমাজে সাধারণ ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। সরকারী উদ্যোগে প্রকাশ্যে এসব হচ্ছেনা বটে কিন্তু গোপনে এই একবিংশ শতাব্দীতেও এই জঘন্য কাজ হয়েই চলেছে। মানুষ দিনের পর দিন ফিরে যাচ্ছে সেই জাহিলিয়াত যুগে যে যুগ থেকে ইসলাম পৃথিবীকে মুক্ত করেছিল। জাহিলিয়াত যুগে কন্যা সন্তানকে বালুতে পুঁতে ফেলা হতোপ্রাচীন ভারতে কন্যা সন্তান জন্মালে নদীতে ভাসিয়ে দিয়ে বলা হতো, ‘তুমি যাও এবং তোমার ভাইকে পাঠিয়ে দাও। আজও সেই লজ্জাজনক কাজ হয়ে চলেছে। তফাত এইটুকু যে এখন বালুতে পুঁতে নানদীতে ভাসায় না.. এখন ডাসবিননোংরা জায়গায় ফেলে দেওয়া হচ্ছে।

 …. কন্যা সন্তান জন্মালে দুঃখী হওয়াঅপছন্দ করা বা হত্যা জাহেলী যুগের আচরণ। মহান আল্লাহ বলেন,

 ☀ ‘তোমাদের সন্তানদেরকে তোমরা দারিদ্র-ভয়ে হত্যা করো নাআমিই তাদেরকে জীবনোপকরণ দিয়ে থাকি এবং তোমাদেরকেও। নিশ্চয় তাদেরকে হত্যা করা মহাপাপ[বানী ইস্রাইল/৩১]

 ☀ ‘তাকে যে সংবাদ দেওয়া হয় (কন্যা সন্তান জন্মের ব্যাপারে)তার গ্লানি হেতু সে নিজ সম্প্রদায় হতে আত্মগোপন করেসে চিন্তা করে যেহীনতা সত্ত্বেও সে তাকে রেখে দেবে না মাটিতে পুঁতে দেবে। সাবধান! তারা যা সিদ্ধান্ত করে তা কতই না নিকৃষ্ট‘ [সুরা নাহল/৫৯]

 বাঁচার অধিকার মানুষের জন্মগত অধিকার। এটা আল্লাহর দেওয়া অধিকার। এই অধিকার বাচ্চা-বড়র আলাদা নয়। নিশ্চয় ভ্রুণ হত্যা করাও খুন। পুত্র-কন্যা যেই ভ্রুণই হোক। এই হত্যার হিসাব দুনিয়াতে না হলেওসেই কন্যা দুনিয়াতে বিচার না পেলেও মহান আল্লাহর কাছে অবশ্যই পাবে। আল্লাহ বলেছেন, ‘যখন জীবন্ত-প্রোথিত কন্যাকে জিজ্ঞেস করা হবেকোন অপরাধে তাকে হত্যা করা হয়েছিল?’… [সুরা তাকফির/৮-৯]

যৌতুক প্রথাকে বন্ধ করতে না পারলেও ঘৃণা করতে তো পারবো…!!!


 শেখ ফরিদ আলম

একটা খবর দেখে মাথা খারাপ হয়ে গেল। একজন মহিলাকে বিয়ের পর যৌতুকের জন্য এতটা অত্যাচার করা হয়েছিল যে, সে বাধ্য হয়ে নিজের কিডনি বিক্রি করে টাকা দিয়েছিল শ্বশুর বাড়িতে। কিন্তু তাতেও তাদের মন ভরেনি। অত্যাচারের মাত্রাও কমেনি। তাই বাধ্য হয়ে নিজের গা’য়ে আগুন দিয়েছেন সেই মহিলা। বর্তমানে যৌতুকের নামে কত নারীকে স্বাভাবিক সুখ থেকে বঞ্চিত করা হয়, অকারণে অত্যাচার করা হয়, পরিকল্পিতভাবে খুন করা হয়, আত্মহত্যা করার জন্য প্ররোচনা দেওয়া হয়, ঘর থেকে তাড়িয়ে দেওয়া হয় তার হিসেব করা কঠিন। এটা অনেক বড় সমস্যা এবং নারীদের সাথে চরম অন্যায়। সবথেকে খারাপ লাগে যখন দেখি, মানুষ পণ দেওয়া নেওয়াকে খারাপই মনে করেনা। এটাকে স্বাভাবিক করে নিয়েছে। পণ আর কেউ চোরের মতো চাই না, বুক ফুলিয়ে চাই। কত বেশি হারামের টাকা ঘরে তুলতে পারলাম তারও প্রতিযোগিতা চলে।

শুধু যে ছেলেপক্ষ যৌতুক চাই বলে দিতে হয় তা নয়। বর্তমানে সমাজে অঙ্গ হয়ে দাঁড়িয়েছে যৌতুক প্রথা। মেয়েপক্ষও এটাকে নিজেদের জন্য ফরয মনে করে ফেলেছেন। যেন দিতেই হবে, না দেওয়াটা অন্যায়। অনেকে আবার বলেন, আমাদের কোন ডিমান্ড নাই। শখ করে যা দেওয়ার দেবেন। শখ করে উপহার দিতে পারবেনা এমন বলছিনা কিন্তু শখটাও এমন হওয়া উচিত না যা মেয়ের বাবার মেরুদন্ডই ভেঙ্গে ফেলে। ধারদেনায় ডুবিয়ে ফেলে। কত পরিবারকেই মেয়ের বিয়ে দিতে দিতে নিঃস্ব হয়ে যেতে দেখেছি। জমি জায়গা বিক্রি করে, চেয়ে, চাঁদা তুলে বিয়ে দিতেও দেখেছি অনেককেই। অথচ, এমন হওয়া উচিত ছিলনা। যৌতুকের কারণে বিয়ে সমাজে কঠিন হয়ে গেছে। আবার এমন লোকও দেখা যায় যারা মেয়ের বিয়েতে যা দিয়েছে তার থেকেও বেশি ডিমান্ড করে ছেলের বিয়েতে। আর মেয়েকে দিয়ে থাকলে ছেলের জন্য চাইতে কোন রকমের লজ্জা বা সংকোচও করেনা।

আমাদের সমাজে নারী কেন্দ্রিক আরেকটা বড় সমস্যা হল কণ্যা ভ্রুণহত্যা। এই অন্যায় কাজ ব্যাঙের ছাতার মতো গজিয়ে ওঠা ক্লিনিক গুলোতে হচ্ছে অহরহ! আর এই ভ্রুণহত্যার জন্যও অনেকটা দায়ি যৌতুক। মানুষ কণ্যা সন্তান নিতে চাইছেনা, হলে অসন্তষ্ট হচ্ছে বা হওয়ার আগে মেরে ফেলছে এটা তো অনেকটা যৌতুকের ভয়েই।জাহিলিয়াত যুগে যেমন কণ্যা হলে মাটিতে পুঁতে ফেলত আর তেমন হচ্ছেনা, ডাক্তারদের কল্যাণে ডাস্টবিন বা আবর্জনায় পড়ে থাকছে সেই ছোট্ট শিশুটির লাশ!!

 ইসলামে যৌতুক নেওয়া নিষিদ্ধ। উলটো স্ত্রীকে মোহর দেওয়া আবশ্যকীয়। ফুলশয্যা হওয়ার পূর্বে তা সম্পূর্ণরুপে অথবা আংশিকরুপে আদায় দেওয়া জরুরি। যেটা বাকী থাকবে সেটা ঋণ। তা আদায় করার নিয়ত রাখতে হবে। বাসর রাতে স্ত্রীর কাছে মাফ চেয়ে নেওয়া যথেষ্ট নয়। মহান আল্লাহ বলেন,‘তোমরা নারীদেরকে তাদের মোহর সন্তুষ্ট মনে দিয়ে দাও, পরে তারা খুশী মনে ওর কিয়দংশ ছেড়ে দিলে, তোমরা তা স্বচ্ছন্দে ভোগ করো’(সুরা নিসা/৪)। বিশ্বনবী মুহাম্মাদ সা. বলেছেন, ‘যে সকল শর্ত তোমাদের জন্য পালন করা জরুরী, তন্মধ্যে সবচাইতে অধিক গুরুত্বপূর্ণ শর্ত হল তাই.. যার দ্বারা তোমরা (পরস্পরের) গোপনাঙ্গ হালাল করে থাকো’ (বুখারী, মুসলিম, মিশকাত/৩১৪৩)। আর দেনমোহর ঐ শ্রেণীর একটি শর্ত। যা আদায় করা জরুরি। যারা স্ত্রীকে মোহর না দিয়ে ধোঁকা দেয় তাদের সম্পর্কে নবী সা. বলেছেন,‘যে কোন ব্যক্তি কোন মহিলাকে কম-বেশী মোহরের বিনিময়ে বিবাহ করেছে, মনে মনে তার হক তাকে আদায় দেওয়ার নিয়ত রাখেনি, তাকে ধোঁকা দিয়েছে, অতঃপর স্ত্রীর হক আদায় না করেই মারা গেছে, সে ব্যক্তি কিয়ামাতের দিন ব্যভিচারী হয়ে আল্লাহর সঙ্গে সাক্ষাত করবে…’ (ত্বাবারানী, সহীহ তারগীব/১৮০৭)। তিনি আরো বলেন, আল্লাহর নিকট সবচাইতে বড় পাপিষ্ঠ সেই ব্যক্তি, যে কোন মহিলাকে বিবাহ করে, অতঃপর তার নিকট থেকে মজা লুটে নিয়ে তাকে তালাক দেয় এবং তার মোহরও আত্মসাত করে…’ (হাকেম, বাইহাকী, সহীহুল জামে’/১৫৬৭)।

 সমাজে যেভাবে পণ প্রথা জায়গা করে নিয়েছে তা থেকে ১০০% মুক্তি পাওয়া খুবই কঠিন। কারণ, মানুষ এটাকে অত্যাবশ্যকীয় ভাবেই মেনে নিয়েছে। অনেকে এমনও মনে করে যে, পণ না দিলে মেয়ে সুখী থাকবেনা। পণ দিলে শ্বশুর বাড়ির সবাই মেয়ের সাথে ভালো ব্যবহার করবে। ব্যাপারটা হাস্যকর! যারা পণ না পেলে অশান্তি করবে তারা কী পণ পেয়ে ভালো ব্যবহার করার মানুষ?!! ওদের মতো অমানুষদের কাছে কী কখনও ভালো ব্যবহার আশা করা যায়?! এই সামাজিক ব্যাধি এতটাই কঠিন যে, কয়েকজন ভালো মানুষ দিয়ে তা বন্ধ করা সম্ভব নয়। যেখানে আইনের সাহায্যে তা বন্ধ হচ্ছেনা সেখানে কয়েকজন লোক কীই বা করতে পারে। তাহলে আমরা কী মুখ বুজে সব সহ্য করব? জ্বী নাহ! আমরা যেখানে যেমন করতে পারবো তা করব। যতটা আমাদের সামর্থ্যে আমরা পারব, করব।

 বিশ্বনবী সা. তো আমাদের বাতলে দিয়েছেন – “তোমাদের মধ্যে কেউ কোন অন্যায় দেখলে তা সে তার হাত দ্বারা প্রতিহত করবে, যদি তা সম্ভব না হয় তবে মুখ দ্বারা প্রতিহত করবে, তাও যদি না করতে পারে তাহলে অন্তর দিয়ে তা ঘৃণা করবে। আর এ হচ্ছে (অন্তর দিয়ে প্রতিহত করা) দুর্বলতম ঈমান।” [মুসলিম: ৪৯] আমরা যদি হাত দিয়ে না আটকাতে পারি, মুখ দিয়ে না প্রতিবাদ করতে পারি কমপক্ষে অন্তর দিয়ে ঘৃণা তো করতে পারবো। গত জুম্মায় ইমাম সাহেব খুতবায় বলেন, তিনি নাকি যে বিয়েতে পণ দেওয়া নেওয়া হয় সেখানে যান না। সবাই জানে তাই তাকে আর কেউ ডাকেও না। আমরা কী এমন করতে পারিনা?! পণ প্রথার বিরুদ্ধে ঘৃণার পরিবেশ তৈরি করতে পারিনা?!

 আর আমরা যারা নিজেদের মুসলিম বলে বিশ্বাস করি, আল্লাহর হুকুম মেনে চলতে চাই, মুহাম্মাদ সা. কে অনুসরণ অনুকরণ করি; আমাদের উচিত নিজেদের এবং পরিবারের কারও বিয়েতে পণের বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়া। আল্লাহর বিচারকে মেনে নেওয়া। মহান আল্লাহ বলেন – ‘তবে কি তারা প্রাক-ইসলামী যুগের বিচার ব্যবস্থা পেতে চায়? খাঁটি বিশ্বাসী সম্প্রদায়ের জন্য বিচারে আল্লাহ অপেক্ষা কে শ্রেষ্ঠতর?’ [সুরা মায়েদা/৫০]