Tuesday 27 September 2016

ইসলাম কেন আলাদা ? মনীষীদের মতামত...



পৃথিবীর একমাত্র ধর্ম ইসলাম যা পরিস্কারভাবে বলে দেয় যদি কোন মুসলিম কুর’আনের কোন বিধান বা কোন আয়াতকে অমান্য করে এমনকি সন্দেহপ্রকাশ করে তবে সে ইসলাম থেকে খারিজ হয়ে যায়। মানে সে আর মুসলিম থাকেনা। অন্য কোন ধর্মেই এমন কথা বলা হয়নি। আর পৃথিবীতে যত ধার্মীক আছে তাদের মধ্যে কেবল মুসলিমরাই এমন যারা কুরানের ব্যাপারে না সন্দেহ করে না কোন আয়াতকে অমান্য করে। বাকী অন্য ধর্মের যতই ধার্মীক বা ধর্মগুরু হোক না কেন সে স্বীকার করতে বাধ্য যে ধর্মগ্রন্থের সবু্কিছু সত্য নয়, সবকিছু সম্ভব নয়, অনেক ভুল আছে। ইসলাম নিয়ে সারা বিশ্বে যত সমালোচনা হয়েছে তার থেকে কয়েক গুন বেশি প্রশংসা হয়েছে। কিন্তু কিচ্ছু ইসলাম বিদ্বেষী শুধু সমালোচনা গুলোকেই প্রচার করে বেড়ায়, পৃথিবীর কত সাহিত্যিক, খেলোয়ার, বিজ্ঞানী, ঐতিহাসিক ইসলামের প্রসংসা করেছে সেসব দেখেও এরা চোখ বন্ধ করে নেই। ভারতে অরুন সৌরি নামেও একজন উগ্র আর.এস.এস কর্মী ইসলামের বিরুদ্ধে বই লিখেছিল। জাকির নাইক যাকে সারা বিশ্বের সামনে নগ্ন করে দিয়েছে যাই হোক, এই আর.এস.এস বা বিজেপি কিন্তু স্বামী বিবেকানন্দকেই তাদের আদর্শ মনে করে। এরা ইসলাম এবং মুসলিম বিদ্বেষী। ভারত থেকে মুসলিমদের তাড়াতে পারলেই এদের শান্তি অথচ স্বামীজি ইসলাম এবং মুসলিমদের সমন্ধে বলেছেন –‘দেখা যাবে ইসলাম যেথায় গিয়েছে সেথায় আদিম নিবাসীদের রক্ষা করেছে। সেসব জাত সেথায় বর্তমান। তাদের ভাষা জাতীয়তা আজও বর্তমান’। [প্রাচ্য ও পাশ্চাত্য/১১৮ পৃষ্ঠা]


মহাত্মা গান্ধী বলেছেন –

‘মুহাম্মাদ (সা) ছিলেন একজন মহান পয়গম্বর। তিনি সাহসী ছিলেন এবং আল্লাহকে ছাড়া কাউকে ভয় করতেন না। তিনি কখনও এক কথা বলে অন্য কাজ করতেন না। এই পয়গম্বর ছিলেন ফকিরের মতো। তিনি যদি ইচ্ছা করতেন তাহলে প্রচুর সম্পদ করতে পারতেন। আমি যখন তাঁর দুঃখের কাহিনী পড়ি তখন আমার চোখ দিয়ে কান্না ঝরে পড়ে। তিনি, তাঁর পরিবারবর্গ এবং তাঁর সঙ্গীরা কতই না কষ্ট ভোগ করেছিলেন স্বেচ্ছায়। তাই আমার মতো একজন সত্যাগ্রহী তাঁর মতো মানুষকে শ্রদ্ধা না করে থাকতে পারে না। যিনি তাঁর মনকে নিবদ্ধ রেখেছিলেন এক আল্লাহর প্রতি এবং তিনি চিরকাল হেঁটেছেন আল্লাহ ভীরুতার পথে। মানব জাতির প্রতি তাঁর সহানুভূতি ছিল সীমাহীন। (Islam and its holy prophet as judged by the Non Muslim world; page- 20)


ঐতিহাসিক ড. তারাচাঁদ বলেছেন – 

‘অমুসলিমদের উচিত গরিব, পদদলিত এবং অনাথদের বন্ধু চিরসত্যবাদী মুহাম্মাদ (সা) সম্পর্কে আরো ভালোভাবে জানা। মুহাম্মাদ (সা) ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করেছিলেন আরাম ও সুখের জীবন। তিনি কঠোর পরিশ্রম করতেন। নিজের পোষাক ও জুতো নিজ হাতে সেলাই করতেন। তিনি তাঁর শত্রুদের ক্ষমা করেছিলেন, দয়া দেখিয়েছিলেন ক্রীতদাসদের প্রতি। তিনি যেমন সাহসী ও অকুতোভয় ছিলেন, তেমনি ছিলেন ভদ্র ও অমায়িক। আমরা অবশ্যই স্বীকার করব যে ইসলামের বিস্তার তলোয়ার দিয়ে রাজ্যজয়ের মাধ্যমে হয়নি, ইসলামের বিস্তার হয়েছে তাঁর ব্যাক্তিত্বের জাদুতে এবং তাঁর আশ্চর্য বাগ্মীতার প্রভাবে। (Islam and its holy prophet as judged by the Non Muslim world; page- 240)


সি.পি. রামস্বামী লিখেছেন –
‘ইসলাম বলতে কি বোঝায় ? আমি মনে করি এবং বিশ্বের সমস্ত চিন্তাশীল ব্যক্তিও এটা স্বীকার করেন যে বিশ্বের এক এবং একমাত্র সত্যিকারের গণতান্ত্রিক ধর্ম ইসলাম যা আজ প্রকৃতপক্ষে কাজ করে চলেছে এই বিশ্বে। একজন হিন্দু হয়ে এবং হিন্দু বিশ্বাসের মধ্যে দৃঢ় ভাবে বেষ্টিত হয়েও আমি অত্যন্ত স্পষ্ট ভাবে এ কথা বলছি । (The Eastern times; 22 desember; 1944)


আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র রায় বলেছেন –
‘জগতের বুকে ইসলাম সর্বোতকৃষ্ট গণতন্ত্রমুলক ধর্ম। প্রশান্ত মহাসাগর হইতে আরম্ভ করিয়া আটলান্টিক মহাসাগরের উপকূল পর্যন্ত সমস্ত মানবমন্ডলীকে উদারনীতির একসূত্রে আবদ্ধ করিয়া ইসল্ম পার্থিব উন্নতির চরম উতকর্ষ লাভ করিয়াছে।


পন্ডিত জহরলাল নেহেরু লিখেছেন –
‘হযরত মহম্মদের প্রচারিত ধর্ম, এর সরলতা, ন্যায়নিষ্ঠা এবং এর বৈপ্লবিক গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা, সমতা ও ন্যায়নীতি পার্শ্ববর্তী রাজ্যের লোকেদের অনুপ্রাণীত করে। কারণ ঐ সমস্ত রাজ্যের জণসাধারনের দীর্ঘদিন যাবত একদিকে শাসক গোষ্টী কর্তৃক নিপীড়িত, শোষিত ও নির্যাতিত হচ্ছিল, অপর দিকে ধর্মীয় ব্যাপারে নির্যাতিত নিষ্পেষিত হচ্ছিল পোপদের হাতে…. তাদের কাছে এ নতুন ব্যবস্থা ছিল মুক্তির দিশারী।


রবীঠকুর লিখেছেন –
“মুহাম্মাদের আবির্ভাব কালে পৌত্তলিক আরবীয়রা যে তাঁহার একেশ্বরবাদ সহজে গ্রহণ করিয়াছিলে তাহা নহে, তাই বলিয়া তিনি তাহাদিগকে ডাকিয়া বলেন নাই, তোমাদের জন্য যাহা সহজ তাহাই তোমাদের ধর্ম, তোমরা বাপ দাদা ধরিয়া যাহা মানিয়া আসিয়াছে তাহাই তোমাদের সত্য। তিনি এমন অদ্ভুত অসত্য বলেন নাই যে, যাহাকে দশ জন মিলিয়া বিশ্বাস করা যায় তাহাই সত্য, যাহাকে দশ জন মিলিয়া পালন করা যায় তাহাই ধর্ম। একথা বলিলে উপস্থিত আপদ মিটিত কিন্তু চিরকালের বিপদ বাড়িয়া চলিত”। (গ্রন্থঃ সঞ্চয়; প্রবন্ধঃ ধর্মের অধিকার)


শেষে বলব, ইসলামের উপর যতই অত্যাচার হোক ইসলাম পৃথিবী থেকে কখনোই মুছে যাবেনা। সারা বিশ্বকেই একদিন ইসলামের পতাকাতলে আসতে হবে, আসতেই হবে। শাইখ আবদুল আজিজ বিন বায (রহ.) খুব চমৎকার একটি কথা বলেছিলেন, “ইসলাম পৃথিবীর বুকে সূর্যের মতন যা কখনো পুরোপুরি হারিয়ে যায় না। যদি কোন স্থানে সে অস্তমিত হয়, অন্য আরেকটি স্থান আলোকিত করে জেগে উঠে।”

মুহাম্মাদ (সা.) মানবতার মুক্তির দিশারী


পৃথিবীতে যে ব্যক্তিত্বকে নিয়ে সবথেকে আলোচনা সমালোচনা হয়েছে তিনি নিসন্দেহে মুহাম্মাদ সা. পৃথিবীর অনেক বিখ্যাত লেখক, খেলোয়ার, সাংবাদীক, রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব, ইতিহাসবীদ, বিজ্ঞানীরা তাঁকে নিয়ে অনেক লেখালেখি, আলোচনা-সমালোচনা করেছেন। অনেকেই তাঁর প্রশংসা করেছেন আবার অনেক লোক সস্তা পাবলিসিটির জন্য তাঁর সমালোচনাও করেছেন। একথা বলছি কারণ ব্লগিং করতে গিয়ে দেখেছি ভাষাজ্ঞান নেই এমন ব্লগারও ইসলামের বিরুদ্ধে লিখে ফেমাস ব্লগার হয়েছে। তবে সলমান রুশদি, আরুন সৌরি, তসলিমা নাসরিনের মতো তৃতীয় শ্রেনীর লেখক বা পরিচালকরা যতই বই লিখে বা ছবি বানিয়ে মুহাম্মাদের (সা.) চরিত্রকে কলংকিত করার চেষ্টা করুক তারা তাদের উদ্দেশ্যে কখনো সফল হবেনা। কারণ সত্য সবসময় মিথ্যার উপর বিজয় লাভ করে। আল্লাহ বলেছেন – ‘বলো, সত্য এসেছে মিথ্যা মুছে গেছে, মিথ্যা তো মুছে যাবার জন্যই’। আজ মুহাম্মাদ সা. সম্পর্কে পৃথিবীর বিখ্যাত মনীষিদের মতামত জানাবো আপনাদের। তসলিমা, রুশদিরা সস্তা পাবলিসিটির জন্যই ইসলামের বিরুদ্ধে লেখে। কিন্তু এরা কোন স্বার্থে ইসলামের প্রশংসা করেছে ?

◆ জর্জ বার্নাড শ’ লিখেছেন☛   আমি তাঁর(মুহাম্মদ) সম্বন্ধে পড়াশোনা করেছি – চমৎকার একজন মানুষ এবং আমার মতে খ্রিস্টবিরোধী হওয়া সত্বেও তাঁকে অবশ্যই মানবতার ত্রাণকর্তা বলতে হবে। আমি বিশ্বাস করি তাঁর মতো ব্যক্তির নিকট যদি আধুনিক বিশ্বের একনায়কতন্ত্র অর্পণ করা হতো তবে এর সমস্যাগুলো তিনি এমনভাবে সফলতার সাথে সমাধান করতেন যা বহু প্রতিক্ষীত শান্তি ও সুখ আনয়ন করতো। আমি ভবিষ্যতবাণী করছি যে মুহাম্মদের ধর্মবিশ্বাস আগামীদিনের ইউরোপের কাছে গ্রহণযোগ্য হবে, যা ইতিমধ্যে বর্তমান ইউরোপে গ্রহণযোগ্যতা পেতে আরম্ভ করেছে। [‘The Genuine Islam,’ Vol. 1, No. 8, 1936]

◆ থমাস কার্লাইল লিখেছেন ☛  এ লোকটিকে (মুহাম্মদ) ঘিরে যে মিথ্যাগুলো (পশ্চিমা অপবাদ) পূন্জীভূত হয়ে আছে- যার ভালো অর্থ হতে পারে ধর্মান্ধতা, তা আমাদের নিজেদের জন্যই লজ্জাজনক। [ ‘Heroes and Hero Worship and the Heroic in History,’ 1840]

◆ মহাত্মা গান্ধী লিখেছেন ☛  আমি জীবনগুলোর মধ্যে সেরা একজনের জীবন সম্পর্কে জানতে চেয়েছিলাম যিনি আজ লক্ষ কোটি মানুষের হৃদয়ে অবিতর্কিতভাবে স্থান নিয়ে আছেন…….যেকোন সময়ের চেয়ে আমি বেশী নিশ্চিত যে ইসলাম তরবারির মাধ্যমে সেইসব দিনগুলোতে মানুষের জীবন-ধারণ পদ্ধতিতে স্থান করে নেয়নি। ইসলামের প্রসারের কারণ হিসেবে কাজ করেছে নবীর দৃঢ় সরলতা, নিজেকে মূল্যহীন প্রতিভাত করা, ভবিষ্যতের ব্যাপারে সতর্ক ভাবনা, বন্ধু ও অনুসারীদের জন্য নিজেকে চরমভাবে উৎসর্গ করা, তাঁর অটল সাহস, ভয়হীনতা, ঈশ্বর এবং তাঁর(নবীর) ওপর অর্পিত দায়িত্বে অসীম বিশ্বাস। এ সব-ই মুসলমানদেরকে সকল বাঁধা কাটিয়ে উঠতে সাহায্য করেছে। যখন আমি মুহাম্মদের জীবনীর ২য় খন্ড বন্ধ করলাম তখন আমি খুব দু:খিত ছিলাম যে এই মহান মানুষটি সম্পর্কে আমার পড়ার আর কিছু বাকি থাকলো না। [‘Young India,’1924]

◆ ড. উইলিয়াম ড্রাপার লিখেছেন ☛  জাস্টিনিয়ানের মৃত্যুর চার বছর পর, ৫৬৯ খ্রিস্টাব্দে আরবে একজন মানুষ জন্মগ্রহণ করেন যিনি সকলের চাইতে মানবজাতির ওপর সবচেয়ে বেশি প্রভাব বিস্তার করেছিলেন….অনেক সাম্রাজ্যের ধর্মীয় প্রধান হওয়া, মানবজাতির এক তৃতীয়াংশের প্রাত্যহিক জীবনের পথনির্দেশক হিসেবে কাজ করা– এসবকিছুই সৃষ্টিকর্তার দূত হিসেবে তাঁর উপাধির যথার্থতা প্রমাণ করে। [History of Intellectual Development of Europe]

◆ Alphonse de LaMartaine লিখেছেন ☛  উদ্দেশ্যের মহত্ব, লক্ষ্য অর্জনের উপায়সমূহের ক্ষুদ্রতা এবং আশ্চর্যজনক ফলাফল যদি অসাধারণ মানুষের তিনটি বৈশিষ্ট্য হয় তবে কে মুহাম্মদের সাথে ইতিহাসের অন্য কোন মহামানবের তুলনা করতে সাহস করবে ? বেশীরভাগ বিখ্যাত ব্যক্তি শুধুমাত্র সেনাবাহিনী, আইন এবং সাম্রাজ্য তৈরী করেছেন। তাঁরা যদি কিছু প্রতিষ্ঠা করে থাকেন সেটা কিছুতেই জাগতিক ক্ষমতার চাইতে বেশি কিছু নয় যা প্রায়ই তাদের চোখের সামনে ছিন্ন-বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। এই মানুষটি শুধুমাত্র সেনাবাহিনী, আইন, সাম্রাজ্য, শাসক, লোকবল-ই পরিচালনা করেননি সেইসাথে তৎকালীন বিশ্বের লক্ষ-লক্ষ মানুষের জীবনকে আন্দোলিত করেছিলেন; সবচেয়ে বড় কথা হলো তিনি দেব-দেবী, ধর্মসমূহ, ধারণাগুলো, বিশ্বাসসমূহ এবং আত্মাগুলোকে আন্দোলিত করেছিলেন। দার্শনিক, বাগ্মী, বার্তাবাহক, আইনপ্রণেতা, নতুন ধারণার উদ্ভাবনকারী/ধারণাকে বাস্তবে রূপদানকারী, বাস্তব বিশ্বাসের পুনরুদ্ধারকারী…..বিশটি জাগতিক এবং একটি আধ্যাত্মিক সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠাতা-এই হলো মুহাম্মদ। মানুষের শ্রেষ্ঠত্ব পরিমাপের যত মাপকাঠি আছে তার ভিত্তিতে বিবেচনা করলে আমরা নিজেদেরকে প্রশ্ন করতে পারি- মুহাম্মদের চেয়ে শ্রেষ্ঠ কেউ আছে কি ? [Historie de la Turquie,’ Paris, 1854]

◆ মাইকেল এইচ. হার্ট লিখেছেন ☛  মুহাম্মদকে সর্বকালের সবচেয়ে প্রভাবশালী ব্যক্তিদের তালিকায় শীর্ষস্থান দেয়াটা অনেক পাঠককে আশ্চর্যান্বিত করতে পারে এবং অন্যদের মনে প্রশ্নের উদ্রেক হতে পারে, কিন্তু ইতিহাসে তিনিই একমাত্র ব্যক্তি যিনি সেকুলার এবং ধর্মীয় উভয় পর্যায়ে সর্বোচ্চ পরিমাণ সফল ছিলেন। সম্ভবত ইসলামের ওপর মুহাম্মদের তুলনামূলক প্রভাব খ্রিস্টান ধর্মের ওপর যীশু ও সেইন্ট পলের সম্মিলিত প্রভাবের চেয়ে বেশী।…. আমি মনে করি, ধর্মীয় ও সেকুলার উভয়ক্ষেত্রে প্রভাবের এই বিরল সমন্বয় যোগ্য ব্যাক্তি হিসেবেই মুহাম্মদকে মানবেতিহাসের সবচেয়ে প্রভাবশালী একক ব্যক্তিত্ব হিসেবে আবির্ভুত করেছে। [The 100, A Ranking of the Most Influential Persons In History,’ New York, 1978]

◆ W. Montgomery Watt লিখেছেন ☛  নিজ আদর্শ প্রতিষ্ঠার জন্য সকল প্রকার কষ্ট সহ্য করা, তাঁকে যারা বিশ্বাস করতো এবং নেতা হিসেবে অনুসরণ করতো তাদের সুউচ্চ চারিত্রিক গুণাবলি, এবং মুহাম্মদের অর্জনের বিশালত্ব- এ সবকিছুই তাঁর সততার সাক্ষ্য দেয়। মনে করা হয় মুহাম্মদ একজন অসাধু ব্যাক্তি যিনি সমাধানের চেয়ে সমস্যাই বেশী সৃষ্টি করেছেন। অধিকন্তু, আর কোন ঐতিহাসিক ব্যক্তিত্বই মুহাম্মদের মতো পাশ্চাত্যে এতবেশী অবমূল্যায়িত হয়নি……শুধুমাত্র যা বর্ণিত হয়েছে তার ভিত্তিতে নয়, আমরা যদি মুহাম্মদকে সামান্য পরিমাণও বুঝতে চাই তবে অবশ্যই প্রয়োজনীয় সততা ও ন্যায়পরায়ণতা সহকারে তাঁকে বিচার করতে হবে। আমরা যদি আমাদের অতীত থেকে উত্তরাধিকারসূত্রে প্রাপ্ত ভূলগুলো সংশোধন করতে চাই তবে এটা ভূলে গেলে চলবে না যে চুড়ান্ত প্রমাণ আপাতদৃষ্টিতে যা সত্য বলে প্রতীয়মান হয় তারচেয়ে অনেক কঠিন শর্ত। এবং এই ব্যাপারে প্রমাণ অর্জন সত্যিই দু:সাধ্য হবে। [‘Muhammad at Mecca,’ Oxford, 1953]

◆ গিবন লিখেছেন ☛  মুহাম্মদের মহত্বের ধারণা আড়ম্বড়পূর্ণ রাজকীয়তার ধারণাকে অস্বীকার করেছে। স্রষ্টার বার্তাবাহক পারিবারিক গৃহকর্মে নিবেদিত ছিলেন; তিনি আগুন জ্বালাতেন; ঘর ঝাড়ু দিতেন; ভেড়ার দুধ দোয়াতেন; এবং নিজ হাতে নিজের জুতা ও পোষাক মেরামত করতেন। পাপের প্রায়শ্চিত্তের ধারণা ও বৈরাগ্যবাদকে তিনি অস্বীকার করেছেন। তাঁকে কখনো অযথা দম্ভ প্রকাশ করতে দেখা যায়নি, একজন আরবের সাধারণ খাদ্যই ছিলো তাঁর আহার্য। [The Decline and Fall of the Roman Empire’ 1823]

◆ Lane-Poole লিখেছেন ☛  তিনি যাদেরকে আশ্রয় দিতেন তাদের জন্য ছিলেন সবচেয়ে বিশ্বস্ত রক্ষাকারী, কথাবার্তায় ছিলেন অত্যন্ত মিষ্টভাষী ও নম্র। তাঁকে যারা দেখত তারা শ্রদ্ধায় পূর্ণ হতো; যারাই তাঁর কাছে এসেছিল তাঁকে ভালবেসেছিল; যারা তাঁর সম্বন্ধে বর্ণনা দিত তারা বলতো, ” তাঁর মতো মানুষ আগে বা পরে আমি কখনো দেখিনি।” তিনি ছিলেন অতি স্বল্পভাষী, কিন্তু যখন তিনি কথা বলতেন জোরের সাথে এবং সুচিন্তিতভাবে কথা বলতেন। এবং তিনি যা বলতেন তা কেউ ভুলতে পারতো না। [Speeches and Table Talk of the Prophet Muhammad]

◆ Jules Masserman লিখেছেন ☛  নেতাদের অবশ্যই তিনধরনের কাজ সম্পাদন করতে হয়- অনুসারীদের মংগলের ব্যবস্থা করা, এমন একটি সামাজিক প্রতিষ্ঠানের সৃষ্টি করা যেটাতে সাধারণ লোকজন তুলনামূলকভাবে নিরাপত্তা বোধ করে, এবং অনুসারীদের জন্য একটি পূর্ণাংগ বিশ্বাসের যোগান দেয়া। প্রথমটি বিবেচনায় নেতা হলেন লুই পাস্তুর এবং সাল্ক( Salk)। দ্বিতীয় এবং তৃতীয় বৈশিষ্ট্য বিবেচনায় একদিকে গান্ধী ও কনফুসিয়াস এবং অন্যদিকে আলেকজান্ডার, সীজার ও হিটলার- এরা হলেন নেতা। যীশুখ্রিস্ট ও গৌতম বুদ্ধ তৃতীয়টি বিবেচনায় নেতা। সম্ভবত মুহাম্মদ হলেন সর্বকালের শ্রেষ্ঠ নেতা যিনি ওপরোক্ত তিনটি কার্যাবলীই সম্পাদন করেছেন। স্বল্প পরিসরে হলেও মুসাও একই কাজ করেছিলেন। [Who Were Histories Great Leaders?’ in TIME Magazine, July 15, 1974]

◆ W.C. Taylor লিখেছেন ☛  দরিদ্র লোকদের প্রতি তাঁর সদয়তা এত বেশী ছিল যে প্রায়ই পরিবার-পরিজনকে উপবাস করতে হতো। তিনি শুধু তাদের অভাব মোচন করেই তৃপ্ত হতেন না, তাদের সাথে কথা-বার্তা বলতেন এবং তাদের দু:খ-দুর্দশার জন্য গভীর সহানুভূতি প্রকাশ করতেন। তিনি ছিলেন ঘনিষ্ট বন্ধু এবং বিশ্বস্ত সহযোগী। [The History of Muhammadanism and its Sects]

◆ Reverend Bosworth Smith লিখেছেন ☛  রাষ্ট্রপ্রধান একইসাথে উপাসনাগৃহের প্রধান, তিনি ছিলেন একই সাথে সীজার এবং পোপ; তিনি পোপ ছিলেন কিন্তু পোপের দুরহংকার ছাড়া, তিনি সীজার ছিলেন কিন্তু সীজারের মতো বিরাট সেনাবাহিনী ছাড়া, দেহরক্ষী ছাড়া, শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনী ছাড়া, স্থায়ী কোন ভাতা ছাড়া। যদি আজ পর্যন্ত কোন মানুষ ন্যায়বিচারপূর্ণ স্বর্গীয় শাসন করে থাকে, তবে সেটা ছিলেন মুহাম্মদ। [Muhammad and Muhammadanism,’ London, 1874]

◆ Dr. Gustav Weil লিখেছেন ☛  মুহাম্মদ ছিলেন তাঁর অনুসারীদের জন্য জাজ্বল্যমান দৃষ্টান্ত। তাঁর চরিত্র ছিল নিষ্কলুষ এবং দৃঢ়। তাঁর গৃহ, পোষাক, খাদ্য- সবই ছিল অতি সাধারণ। তিনি এতই নিরহংকার ছিলেন যে তাঁর সংগীদের কাছ থেকে বিশেষ কোন সম্মান গ্রহণ করতেন না কিংবা যে কাজ তিনি নিজে করতে পারতেন তাঁর জন্য অযথা ভৃত্যের সাহায্য নিতেন না। সবসময় সবার জন্য তাঁর দ্বার ছিল উন্মুক্ত ছিল। তিনি অসুস্থ ব্যক্তিকে দেখতে যেতেন এবং সবার প্রতি তাঁর অপরিসীম সহানুভূতি ছিল। তাঁর বদান্যতা ও মহানুভবতা ছিলো অসীম, সেইসাথে তিনি সবসময় অনুসরীদের মংগলের কথা চিন্তা করতেন। [‘History of the Islamic Peoples’]

◆ J.W.H. Stab লিখেছেন ☛  তাঁর কাজের সীমা এবং স্থায়িত্ব বিবেচনা করলে শুধু মক্কার নবী হিসেবে নয় পৃথিবীর ইতিহাসে তিনি আরও দীপ্তিময়ভাবে জ্বলজ্বল করছেন। …..মানুষের বিখ্যাত হওয়ার মাপকাঠি অনুসারে বিচার করলে তাঁর সাথে অন্য কোন মরণশীলের খ্যাতি তুলনীয় হতে পারে কি ? [Islam and its Founder]

◆ Washington Irving লিখেছেন ☛  মুহাম্মদের সামরিক বিজয় তাঁর মাঝে কোন গর্ব ও অযথা দম্ভ জাগায়নি। প্রতিকূল দিনগুলোতে তাঁর আচার-ব্যবহার ও পোষাক-আশাক যেরকম সাধারণ ছিলো সর্বোচ্চ ক্ষমতার অধিকারী হওয়ার পরও তা তিনি বজায় রেখেছিলে। রাজকীয় জাঁকজমক দূরে থাক, এমনকি কক্ষে ঢোকার পর তাঁর প্রতি কেউ বিশেষভাবে সম্মান প্রদর্শন করলে তিনি রেগে যেতেন। তিনি ছিলেন সাধারণ মানুষের ভালোবাসার পাত্র কারণ সবাইকেই তিনি আতিথেয়তার সাথে গ্রহণ করতেন এবং মনোযোগ সহকারে তাদের অভিযোগ শুনতেন। ব্যক্তিগত লেন-দেনের ক্ষেত্রে ছিলেন ন্যায়পরায়ণ । বন্ধু-আগন্তুক, ধনী-দরিদ্র, সবল-দুর্বল সবার সাথে সমতার সাথে ব্যবহার করতেন। [‘Life of Muhammad,’ New York,1920]

এরকম হাজারো উদাহরণ দেওয়া যেতে পারে। এঁরা কোন স্বার্থসিদ্ধির জন্য নয় বরং ইসলাম ও মুহাম্মাদের (সা.) সৌন্দর্য এবং চরিত্রে মুগ্ধ হয়েই লিখেছিলেন। তসলিমা নাসরিন কিংবা সলমান রুশদির অনান্য লেখা গুলো পর্যালোচনা করলে দেখা যাবে তাদের লেখার মান খুব নিন্মমানের। এমন আহামরী কিছু নয় যে এতটা জনপ্রিয়তা পাবে। শুধু ইসলামের বিরুদ্ধে লেখার জন্যই আজ তারা পরিচিত। যারা একথা বিশ্বাস করেন না তাদের কাছে একটা প্রশ্ন, সারা বিশ্বে হুমায়ন আহমেদ বেশি পরিচিত নাকি তসলিমা নাসরিন? আল্বাত তসলিমা নাসরিন। যারা সাহিত্যের ‘স’ ও পড়েনা তাড়াও তসলিমাকে চেনে। এর একমাত্র কারণ ইসলামের বিরুদ্ধে লেখা। নিজের প্রতিভা বা লেখনি ক্ষমতার জন্য নয়। হুমায়ন স্যারের পায়ের ধুলোর বরাবরও কি তসলিমা নাসরিন?

Wednesday 14 September 2016

কন্যা হত্যা এবং ইসলাম

– ‘এখনই বাচ্চা নিতে চাইছিনা

– ‘প্রথম বাচ্চা তো সবে দের বছর হল..

– ‘খাওয়াবো কীথাকবে কোথায়?

– ‘শুধু খাওয়ালেই হয়নামানুষও করতে হবে

– ‘মেয়ের বিয়ে দেওয়ার মত টাকা কোথায় পাবো

 এরকম হাজারও বাহানায় ভ্রুণ হত্যা করা সমাজে সাধারণ ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। সরকারী উদ্যোগে প্রকাশ্যে এসব হচ্ছেনা বটে কিন্তু গোপনে এই একবিংশ শতাব্দীতেও এই জঘন্য কাজ হয়েই চলেছে। মানুষ দিনের পর দিন ফিরে যাচ্ছে সেই জাহিলিয়াত যুগে যে যুগ থেকে ইসলাম পৃথিবীকে মুক্ত করেছিল। জাহিলিয়াত যুগে কন্যা সন্তানকে বালুতে পুঁতে ফেলা হতোপ্রাচীন ভারতে কন্যা সন্তান জন্মালে নদীতে ভাসিয়ে দিয়ে বলা হতো, ‘তুমি যাও এবং তোমার ভাইকে পাঠিয়ে দাও। আজও সেই লজ্জাজনক কাজ হয়ে চলেছে। তফাত এইটুকু যে এখন বালুতে পুঁতে নানদীতে ভাসায় না.. এখন ডাসবিননোংরা জায়গায় ফেলে দেওয়া হচ্ছে।

 …. কন্যা সন্তান জন্মালে দুঃখী হওয়াঅপছন্দ করা বা হত্যা জাহেলী যুগের আচরণ। মহান আল্লাহ বলেন,

 ☀ ‘তোমাদের সন্তানদেরকে তোমরা দারিদ্র-ভয়ে হত্যা করো নাআমিই তাদেরকে জীবনোপকরণ দিয়ে থাকি এবং তোমাদেরকেও। নিশ্চয় তাদেরকে হত্যা করা মহাপাপ[বানী ইস্রাইল/৩১]

 ☀ ‘তাকে যে সংবাদ দেওয়া হয় (কন্যা সন্তান জন্মের ব্যাপারে)তার গ্লানি হেতু সে নিজ সম্প্রদায় হতে আত্মগোপন করেসে চিন্তা করে যেহীনতা সত্ত্বেও সে তাকে রেখে দেবে না মাটিতে পুঁতে দেবে। সাবধান! তারা যা সিদ্ধান্ত করে তা কতই না নিকৃষ্ট‘ [সুরা নাহল/৫৯]

 বাঁচার অধিকার মানুষের জন্মগত অধিকার। এটা আল্লাহর দেওয়া অধিকার। এই অধিকার বাচ্চা-বড়র আলাদা নয়। নিশ্চয় ভ্রুণ হত্যা করাও খুন। পুত্র-কন্যা যেই ভ্রুণই হোক। এই হত্যার হিসাব দুনিয়াতে না হলেওসেই কন্যা দুনিয়াতে বিচার না পেলেও মহান আল্লাহর কাছে অবশ্যই পাবে। আল্লাহ বলেছেন, ‘যখন জীবন্ত-প্রোথিত কন্যাকে জিজ্ঞেস করা হবেকোন অপরাধে তাকে হত্যা করা হয়েছিল?’… [সুরা তাকফির/৮-৯]

যৌতুক প্রথাকে বন্ধ করতে না পারলেও ঘৃণা করতে তো পারবো…!!!


 শেখ ফরিদ আলম

একটা খবর দেখে মাথা খারাপ হয়ে গেল। একজন মহিলাকে বিয়ের পর যৌতুকের জন্য এতটা অত্যাচার করা হয়েছিল যে, সে বাধ্য হয়ে নিজের কিডনি বিক্রি করে টাকা দিয়েছিল শ্বশুর বাড়িতে। কিন্তু তাতেও তাদের মন ভরেনি। অত্যাচারের মাত্রাও কমেনি। তাই বাধ্য হয়ে নিজের গা’য়ে আগুন দিয়েছেন সেই মহিলা। বর্তমানে যৌতুকের নামে কত নারীকে স্বাভাবিক সুখ থেকে বঞ্চিত করা হয়, অকারণে অত্যাচার করা হয়, পরিকল্পিতভাবে খুন করা হয়, আত্মহত্যা করার জন্য প্ররোচনা দেওয়া হয়, ঘর থেকে তাড়িয়ে দেওয়া হয় তার হিসেব করা কঠিন। এটা অনেক বড় সমস্যা এবং নারীদের সাথে চরম অন্যায়। সবথেকে খারাপ লাগে যখন দেখি, মানুষ পণ দেওয়া নেওয়াকে খারাপই মনে করেনা। এটাকে স্বাভাবিক করে নিয়েছে। পণ আর কেউ চোরের মতো চাই না, বুক ফুলিয়ে চাই। কত বেশি হারামের টাকা ঘরে তুলতে পারলাম তারও প্রতিযোগিতা চলে।

শুধু যে ছেলেপক্ষ যৌতুক চাই বলে দিতে হয় তা নয়। বর্তমানে সমাজে অঙ্গ হয়ে দাঁড়িয়েছে যৌতুক প্রথা। মেয়েপক্ষও এটাকে নিজেদের জন্য ফরয মনে করে ফেলেছেন। যেন দিতেই হবে, না দেওয়াটা অন্যায়। অনেকে আবার বলেন, আমাদের কোন ডিমান্ড নাই। শখ করে যা দেওয়ার দেবেন। শখ করে উপহার দিতে পারবেনা এমন বলছিনা কিন্তু শখটাও এমন হওয়া উচিত না যা মেয়ের বাবার মেরুদন্ডই ভেঙ্গে ফেলে। ধারদেনায় ডুবিয়ে ফেলে। কত পরিবারকেই মেয়ের বিয়ে দিতে দিতে নিঃস্ব হয়ে যেতে দেখেছি। জমি জায়গা বিক্রি করে, চেয়ে, চাঁদা তুলে বিয়ে দিতেও দেখেছি অনেককেই। অথচ, এমন হওয়া উচিত ছিলনা। যৌতুকের কারণে বিয়ে সমাজে কঠিন হয়ে গেছে। আবার এমন লোকও দেখা যায় যারা মেয়ের বিয়েতে যা দিয়েছে তার থেকেও বেশি ডিমান্ড করে ছেলের বিয়েতে। আর মেয়েকে দিয়ে থাকলে ছেলের জন্য চাইতে কোন রকমের লজ্জা বা সংকোচও করেনা।

আমাদের সমাজে নারী কেন্দ্রিক আরেকটা বড় সমস্যা হল কণ্যা ভ্রুণহত্যা। এই অন্যায় কাজ ব্যাঙের ছাতার মতো গজিয়ে ওঠা ক্লিনিক গুলোতে হচ্ছে অহরহ! আর এই ভ্রুণহত্যার জন্যও অনেকটা দায়ি যৌতুক। মানুষ কণ্যা সন্তান নিতে চাইছেনা, হলে অসন্তষ্ট হচ্ছে বা হওয়ার আগে মেরে ফেলছে এটা তো অনেকটা যৌতুকের ভয়েই।জাহিলিয়াত যুগে যেমন কণ্যা হলে মাটিতে পুঁতে ফেলত আর তেমন হচ্ছেনা, ডাক্তারদের কল্যাণে ডাস্টবিন বা আবর্জনায় পড়ে থাকছে সেই ছোট্ট শিশুটির লাশ!!

 ইসলামে যৌতুক নেওয়া নিষিদ্ধ। উলটো স্ত্রীকে মোহর দেওয়া আবশ্যকীয়। ফুলশয্যা হওয়ার পূর্বে তা সম্পূর্ণরুপে অথবা আংশিকরুপে আদায় দেওয়া জরুরি। যেটা বাকী থাকবে সেটা ঋণ। তা আদায় করার নিয়ত রাখতে হবে। বাসর রাতে স্ত্রীর কাছে মাফ চেয়ে নেওয়া যথেষ্ট নয়। মহান আল্লাহ বলেন,‘তোমরা নারীদেরকে তাদের মোহর সন্তুষ্ট মনে দিয়ে দাও, পরে তারা খুশী মনে ওর কিয়দংশ ছেড়ে দিলে, তোমরা তা স্বচ্ছন্দে ভোগ করো’(সুরা নিসা/৪)। বিশ্বনবী মুহাম্মাদ সা. বলেছেন, ‘যে সকল শর্ত তোমাদের জন্য পালন করা জরুরী, তন্মধ্যে সবচাইতে অধিক গুরুত্বপূর্ণ শর্ত হল তাই.. যার দ্বারা তোমরা (পরস্পরের) গোপনাঙ্গ হালাল করে থাকো’ (বুখারী, মুসলিম, মিশকাত/৩১৪৩)। আর দেনমোহর ঐ শ্রেণীর একটি শর্ত। যা আদায় করা জরুরি। যারা স্ত্রীকে মোহর না দিয়ে ধোঁকা দেয় তাদের সম্পর্কে নবী সা. বলেছেন,‘যে কোন ব্যক্তি কোন মহিলাকে কম-বেশী মোহরের বিনিময়ে বিবাহ করেছে, মনে মনে তার হক তাকে আদায় দেওয়ার নিয়ত রাখেনি, তাকে ধোঁকা দিয়েছে, অতঃপর স্ত্রীর হক আদায় না করেই মারা গেছে, সে ব্যক্তি কিয়ামাতের দিন ব্যভিচারী হয়ে আল্লাহর সঙ্গে সাক্ষাত করবে…’ (ত্বাবারানী, সহীহ তারগীব/১৮০৭)। তিনি আরো বলেন, আল্লাহর নিকট সবচাইতে বড় পাপিষ্ঠ সেই ব্যক্তি, যে কোন মহিলাকে বিবাহ করে, অতঃপর তার নিকট থেকে মজা লুটে নিয়ে তাকে তালাক দেয় এবং তার মোহরও আত্মসাত করে…’ (হাকেম, বাইহাকী, সহীহুল জামে’/১৫৬৭)।

 সমাজে যেভাবে পণ প্রথা জায়গা করে নিয়েছে তা থেকে ১০০% মুক্তি পাওয়া খুবই কঠিন। কারণ, মানুষ এটাকে অত্যাবশ্যকীয় ভাবেই মেনে নিয়েছে। অনেকে এমনও মনে করে যে, পণ না দিলে মেয়ে সুখী থাকবেনা। পণ দিলে শ্বশুর বাড়ির সবাই মেয়ের সাথে ভালো ব্যবহার করবে। ব্যাপারটা হাস্যকর! যারা পণ না পেলে অশান্তি করবে তারা কী পণ পেয়ে ভালো ব্যবহার করার মানুষ?!! ওদের মতো অমানুষদের কাছে কী কখনও ভালো ব্যবহার আশা করা যায়?! এই সামাজিক ব্যাধি এতটাই কঠিন যে, কয়েকজন ভালো মানুষ দিয়ে তা বন্ধ করা সম্ভব নয়। যেখানে আইনের সাহায্যে তা বন্ধ হচ্ছেনা সেখানে কয়েকজন লোক কীই বা করতে পারে। তাহলে আমরা কী মুখ বুজে সব সহ্য করব? জ্বী নাহ! আমরা যেখানে যেমন করতে পারবো তা করব। যতটা আমাদের সামর্থ্যে আমরা পারব, করব।

 বিশ্বনবী সা. তো আমাদের বাতলে দিয়েছেন – “তোমাদের মধ্যে কেউ কোন অন্যায় দেখলে তা সে তার হাত দ্বারা প্রতিহত করবে, যদি তা সম্ভব না হয় তবে মুখ দ্বারা প্রতিহত করবে, তাও যদি না করতে পারে তাহলে অন্তর দিয়ে তা ঘৃণা করবে। আর এ হচ্ছে (অন্তর দিয়ে প্রতিহত করা) দুর্বলতম ঈমান।” [মুসলিম: ৪৯] আমরা যদি হাত দিয়ে না আটকাতে পারি, মুখ দিয়ে না প্রতিবাদ করতে পারি কমপক্ষে অন্তর দিয়ে ঘৃণা তো করতে পারবো। গত জুম্মায় ইমাম সাহেব খুতবায় বলেন, তিনি নাকি যে বিয়েতে পণ দেওয়া নেওয়া হয় সেখানে যান না। সবাই জানে তাই তাকে আর কেউ ডাকেও না। আমরা কী এমন করতে পারিনা?! পণ প্রথার বিরুদ্ধে ঘৃণার পরিবেশ তৈরি করতে পারিনা?!

 আর আমরা যারা নিজেদের মুসলিম বলে বিশ্বাস করি, আল্লাহর হুকুম মেনে চলতে চাই, মুহাম্মাদ সা. কে অনুসরণ অনুকরণ করি; আমাদের উচিত নিজেদের এবং পরিবারের কারও বিয়েতে পণের বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়া। আল্লাহর বিচারকে মেনে নেওয়া। মহান আল্লাহ বলেন – ‘তবে কি তারা প্রাক-ইসলামী যুগের বিচার ব্যবস্থা পেতে চায়? খাঁটি বিশ্বাসী সম্প্রদায়ের জন্য বিচারে আল্লাহ অপেক্ষা কে শ্রেষ্ঠতর?’ [সুরা মায়েদা/৫০]

হাসতে হাসতে জীনা শিখো !

শেখ ফরিদ আলম

আশ্চর্য হয় যখন দেখি অনান্য সম্প্রদায়ের লোকেরা ছোট ছোট কথা নিয়ে এত আলোচনা, বিশ্লেষন করে যায় আর আমরা মুসলমানেরা কুর’আন হাদিসকে তুচ্ছ মনে করে ওদের আলোচনা গুলো পড়তে থাকি বা ওদের আলোচনায় শামীল হয়। গান্ধীজী বা রবীন্দ্রনাথের একটা সামান্য কথা বা বাণী নিয়ে কতই না আলোচনা হয়। অথচ রাসুলুল্লাহর সা. এমন সব বাণী আছে যা যেকোন মানুষকে পারফেক্ট করে তুলতে পারে। যা সমাজ বা দেশের জন্য হীতকর। ছোট একটা হাদীসে এমন নির্দেশ আছে যা মানুষের সাথে মানুষের সম্পর্ককে আরো মজবুত করতে পারে। আমি ১০০% বিশ্বাস করি ইসলামকে পুরোপুরি মেনে চললে সমাজে শান্তি আসবে। চারিদিকের এত ঝামেলা, খুন, ধর্ষন, অত্যাচারের মাত্রা অনেক কমে যাবে। আজ রাসুলুল্লাহর সা. একটা হাদিস নিয়ে লিখব। যা আমরা তেমন গুরুত্ব দিয়না। অথচ আমাদের জন্য তা খুবই গুরুত্বপুর্ন। রাসুল সা. বলেছেন,

‘প্রত্যেক কল্যাণমুলক কর্মই হল সাদকাহ। আর তোমার ভায়ের সহিত তোমার হাসিমুখে সাক্ষাত করাও…..কল্যাণমুলক কর্মের অন্তরভুক্ত’ (আহমেদ, তিরমীযি, হাকেম, সহিহুল জা’মে ৪৫৫৭ নং হাদীস)।

সদকাহ হল নেকির কাজ। লোকেদের দেখে হাসাটাও সদকাহ। সুহবান’আল্লাহ। রাসুল সা. আরো বলেছে- ‘কল্যাণমুলক কোন কর্মকেই অবজ্ঞা করো না, যদিও তা তোমার ভায়ের সহিত হাসি মুখে সাক্ষাত করেও হয়’ (মুসলিম/২৬২৬)।

হাসি কান্না নিয়েই জীবন। জীবন খুবই ছোট। এই ছোট জীবনেই আসে দুঃখ, যন্ত্রনা, ব্যথা, বিশ্বাসঘাতকতা ইত্যাদি। এত সবের মধ্যেও মানুষকে হাসা উচিত। কারণ এই সকল ব্যাপারে হাসি ঔষধের কাজ করে। কাঁদতে কাঁদতে হাসতে শেখাটা জীবনের একটা বড় শিক্ষা। এরই মধ্যে আছে সুখের রহস্য।

চারিদিকে তাকিয়ে দেখুন, মানুষ কিন্তু হাসমুখ লোকদেরই বেশি পছন্দ করে।যাদের ঠোটের কোনে মুচকি হাসি লেগে থাকে। সে নেতা হোক বা ডাক্তার অথবা কোন দোকানদার। আমরাও সেই সব দোকানেই যেতে বেশি স্বচ্ছন্দবোধ করি যেখানে হাসমুখ, মধুর মেজাজের দোকানি আছে। একটা চিনা প্রবাদ আছে ‘যারা হাসেনা তাদের কখনো দোকান করা উচিত নয়’। একজন সফল বিক্রেতা হতে হলে প্রথমেই আপনাকে ঠান্ডা মেজাজ আর হাসমুখ হতে হবে।

ডেল কার্নেগী বলেছেন, ‘সবসময় হাসতে হবে। হাসির মাধ্যমে আমরা জীবনের অনেক সমস্যাকেই দূর আকাশে পাঠাতে পারি’।  সমস্যা যতই হোক, দুঃখ যতই হোক সেই সময় মেজাজ ঠান্ডা রাখা জরুরি।

আপনার মুখের হাসি আপনাকে সুন্দর করে, আপনার ব্যক্তিত্বকে আকর্ষনীয় করে। মানুষকে তখনই সব থেকে সুন্দর লাগে যখন সে হাসে। গোমড়ামুখোদের কেউ পছন্দ করেনা। তাদের বন্ধু বান্ধব খুবই কম হয়। মুখে হাসি নিয়ে সহজেই অপরিচিত জায়গায়  আড্ডা জমিয়ে দেওয়া যায়।

সেই স্ত্রী সহজেই স্বামীর প্রিয়তমা হতে পারে যার মুখে হাসি লেগে থাকে। সোনা গয়না বা দামি পোষাকের থেকে স্বামীর কাছে তার ঠোটের হাসিই বেশি সুন্দর লাগে। তেমনি সেই স্বামী সহজেই স্ত্রীর মন জয় করতে পারে যার মুখে হাসি লেগে থাকে।

তাই আসুন আমরা কোন রকম পরিশ্রম না করে নেকি কামায়। লোকেদের দেখে, আত্মীয় স্বজন, বন্ধুবান্ধবদের দেখে তাদের হাসি উপহার দেয়। যাদের সাথে মনোমালিন্য হয়েছে তাদের দেখেও হাসি। দেখবেন সেও আপনাকে তাই ফিরিয়ে দেবে।

Sunday 11 September 2016

প্রসঙ্গঃ কুরবানীর ছবি ফেসবুকে শেয়ার করা

শেখ ফরিদ আলম


ইসলামে লোক দেখানো ব্যাপারের কোন স্থান নেই। বিশেষ করে ইবাদাতের ক্ষেত্রে। নবী করীম (সা) বলেছেনআমি তোমাদের ব্যাপারে ছোট শিরক থেকে খুব ভয় করছি। সাহাবীরা বললেন  ইয়া রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! ছোট শিরক কি? রসুলুল্লাহ (সা) বললেন, তা হলোরিয়া বা লোক দেখানো ইবাদত। যেদিন আল্লাহ তাআলা বান্দাদের আমলের পুরস্কার প্রদান করবেন, সেদিন রিয়াকারীদেরকে বলবেনঃ যাও, দুনিয়াতে যাদেরকে দেখানোর জন্য আমল করতে, তাদের কাছে যাও। দেখো তাদের কাছ থেকে কোনো পুরস্কার পাও কিনা? [মুসনাদে আহমাদ, সহীহ ইবনে খুজায়মা, হাদীসটি সহীহ  শায়খ আলবানী।]

 নিজের কাজ বা ইবাদতে রিয়া বা অহংকার প্রকাশ কোন প্রকৃত মুসলিমের জন্য খুবই লজ্জাকর। সে সবসময় এই ব্যাপারে সাবধান। স্যোসাল মিডিয়া আসার পর মানুষ নিজেকে প্রকাশ করার ম্যানিয়ায় ভুগছে। এটা একজন সাধারন মানুষের ব্যক্তিগত ব্যাপার গুলোর ক্ষেত্রে হতেই পারে তবে প্রকৃত মুসলিম এসব করতে পারে না। কুর'বানী সামনে বলেই এসব কথা বলছি। কারন, কয়েক বছরের ফেসবুক অভিজ্ঞতায় বলছি অনেকেই আছে যারা আল্লাহর উদ্দেশে করা কুরবানীর ফটো গর্বের সাথে ফেসবুকে প্রকাশ করে। এটা কোন ভাবেই ঠিক নয়। এটা সামাজিক সাইট বলেই এটা করা ঠিক নয়। আপনি আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য কুরবানী করবেন সেটা দুনিয়াকে জানানো কি জরুরি?মহান আল্লাহ বলেন, আপনি বলুনঃ নিশ্চয়ই আমার সালাত, আমার কোরবানি এবং আমার জীবন ও মৃত্যু - বিশ্ব-প্রতিপালক আল্লাহরই জন্য। [সুরা আল-আনআমঃ ১৬২]

আর এতে রিয়ার সম্ভাবনা তো থাকেই সাথে ভালো দামী পশু কুরবানী দেওয়ার অহংকার প্রকাশেরও সম্ভাবনা থাকে।নিশ্চয় আল্লাহ দাম্ভিক অহংকারীকে পছন্দ করেন না[সূরা লোকমান; ৩১:১৮]। প্রিয় নবী মুহাম্মাদ (সা) বলেছেনঃ যার অন্তরে অণু পরিমান অহংকার থাকবে সে জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবেনা। শয়তানের কিন্তু বিশাল জয় যদি সে আপনার মনে রিয়া বা অহংকার সরিষা দানা পরিমানও সৃষ্টি করতে পারে। তাই সাবধান শয়তান থেকে!

 আবার অনেকে অন্য ধর্মের লোকেদের এসব দেখিয়েও আনন্দ পান। বিকৃত আনন্দ। এটা আরো ভয়ংকর ব্যাপার। একজন মুসলিম হিসেবে মনে রাখা উচিত ইসলাম শান্তির ধর্ম। শান্তি প্রতিষ্ঠা করার চেষ্টা করা প্রত্যেক মুসলিমের কর্তব্য, দায়িত্ব। আমরা নবী জীবনি পড়লেই বুঝতে পারব বিশ্বনবী (সা.) সবসময় শান্তি প্রতিষ্ঠা করার চেষ্টা করেছেন। শান্তির জন্যই একের পর এক সন্ধি করেছেন। তাই সকল ফেসবুক ফ্রেন্ডদের অনুরোধ করব এরকম জঘন্য কাজ করবেন না। কলকাতার দুজন বিখ্যাত আলেমও অনুরোধ করেছেন যাতে কেউ কুরবানীর ছবি শেয়ার না করে। কুরবানী একটা ইবাদত। এটাকে প্রচার করে বেড়ানোর কিছু নাই। আল্লাহ আমাদের সকলকে বুঝ দান করুন এবং শান্তি প্রতিষ্ঠা করার সৈনিক হিসেবে কাজ করার তাওফিক দিন। আমীন!

Saturday 10 September 2016

ইসলাম কেন আলাদা ?


পৃথিবীর একমাত্র ধর্ম ইসলাম যা পরিস্কারভাবে বলে দেয় যদি কোন মুসলিম কুর’আনের কোন বিধান বা কোন আয়াতকে অমান্য করে এমনকি সন্দেহপ্রকাশ করে তবে সে ইসলাম থেকে খারিজ হয়ে যায়। মানে সে আর মুসলিম থাকেনা। অন্য কোন ধর্মেই এমন কথা বলা হয়নি। আর পৃথিবীতে যত ধার্মীক আছে তাদের মধ্যে কেবল মুসলিমরাই এমন যারা কুরানের ব্যাপারে না সন্দেহ করে না কোন আয়াতকে অমান্য করে। বাকী অন্য ধর্মের যতই ধার্মীক বা ধর্মগুরু হোক না কেন সে স্বীকার করতে বাধ্য যে ধর্মগ্রন্থের সবু্কিছু সত্য নয়, সবকিছু সম্ভব নয়, অনেক ভুল আছে। ইসলাম নিয়ে সারা বিশ্বে যত সমালোচনা হয়েছে তার থেকে কয়েক গুন বেশি প্রশংসা হয়েছে। কিন্তু কিচ্ছু ইসলাম বিদ্বেষী শুধু সমালোচনা গুলোকেই প্রচার করে বেড়ায়, পৃথিবীর কত সাহিত্যিক, খেলোয়ার, বিজ্ঞানী, ঐতিহাসিক ইসলামের প্রসংসা করেছে সেসব দেখেও এরা চোখ বন্ধ করে নেই। ভারতে অরুন সৌরি নামেও একজন উগ্র আর.এস.এস কর্মী ইসলামের বিরুদ্ধে বই লিখেছিল। জাকির নাইক যাকে সারা বিশ্বের সামনে নগ্ন করে দিয়েছে যাই হোক, এই আর.এস.এস বা বিজেপি কিন্তু স্বামী বিবেকানন্দকেই তাদের আদর্শ মনে করে। এরা ইসলাম এবং মুসলিম বিদ্বেষী। ভারত থেকে মুসলিমদের তাড়াতে পারলেই এদের শান্তি অথচ স্বামীজি ইসলাম এবং মুসলিমদের সমন্ধে বলেছেন –‘দেখা যাবে ইসলাম যেথায় গিয়েছে সেথায় আদিম নিবাসীদের রক্ষা করেছে। সেসব জাত সেথায় বর্তমান। তাদের ভাষা জাতীয়তা আজও বর্তমান’। [প্রাচ্য ও পাশ্চাত্য/১১৮ পৃষ্ঠা]

মহাত্মা গান্ধী বলেছেন‘মুহাম্মাদ (সা) ছিলেন একজন মহান পয়গম্বর। তিনি সাহসী ছিলেন এবং আল্লাহকে ছাড়া কাউকে ভয় করতেন না। তিনি কখনও এক কথা বলে অন্য কাজ করতেন না। এই পয়গম্বর ছিলেন ফকিরের মতো। তিনি যদি ইচ্ছা করতেন তাহলে প্রচুর সম্পদ করতে পারতেন। আমি যখন তাঁর দুঃখের কাহিনী পড়ি তখন আমার চোখ দিয়ে কান্না ঝরে পড়ে। তিনি, তাঁর পরিবারবর্গ এবং তাঁর সঙ্গীরা কতই না কষ্ট ভোগ করেছিলেন স্বেচ্ছায়। তাই আমার মতো একজন সত্যাগ্রহী তাঁর মতো মানুষকে শ্রদ্ধা না করে থাকতে পারে না। যিনি তাঁর মনকে নিবদ্ধ রেখেছিলেন এক আল্লাহর প্রতি এবং তিনি চিরকাল হেঁটেছেন আল্লাহ ভীরুতার পথে। মানব জাতির প্রতি তাঁর সহানুভূতি ছিল সীমাহীন। (Islam and its holy prophet as judged by the Non Muslim world; page- 20)

ঐতিহাসিক ড. তারাচাঁদ বলেছেন‘অমুসলিমদের উচিত গরিব, পদদলিত এবং অনাথদের বন্ধু চিরসত্যবাদী মুহাম্মাদ (সা) সম্পর্কে আরো ভালোভাবে জানা। মুহাম্মাদ (সা) ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করেছিলেন আরাম ও সুখের জীবন। তিনি কঠোর পরিশ্রম করতেন। নিজের পোষাক ও জুতো নিজ হাতে সেলাই করতেন। তিনি তাঁর শত্রুদের ক্ষমা করেছিলেন, দয়া দেখিয়েছিলেন ক্রীতদাসদের প্রতি। তিনি যেমন সাহসী ও অকুতোভয় ছিলেন, তেমনি ছিলেন ভদ্র ও অমায়িক। আমরা অবশ্যই স্বীকার করব যে ইসলামের বিস্তার তলোয়ার দিয়ে রাজ্যজয়ের মাধ্যমে হয়নি, ইসলামের বিস্তার হয়েছে তাঁর ব্যাক্তিত্বের জাদুতে এবং তাঁর আশ্চর্য বাগ্মীতার প্রভাবে। (Islam and its holy prophet as judged by the Non Muslim world; page- 240)

সি.পি. রামস্বামী লিখেছেন –
‘ইসলাম বলতে কি বোঝায় ? আমি মনে করি এবং বিশ্বের সমস্ত চিন্তাশীল ব্যক্তিও এটা স্বীকার করেন যে বিশ্বের এক এবং একমাত্র সত্যিকারের গণতান্ত্রিক ধর্ম ইসলাম যা আজ প্রকৃতপক্ষে কাজ করে চলেছে এই বিশ্বে। একজন হিন্দু হয়ে এবং হিন্দু বিশ্বাসের মধ্যে দৃঢ় ভাবে বেষ্টিত হয়েও আমি অত্যন্ত স্পষ্ট ভাবে এ কথা বলছি । (The Eastern times; 22 desember; 1944)

আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র রায় বলেছেন –
‘জগতের বুকে ইসলাম সর্বোতকৃষ্ট গণতন্ত্রমুলক ধর্ম। প্রশান্ত মহাসাগর হইতে আরম্ভ করিয়া আটলান্টিক মহাসাগরের উপকূল পর্যন্ত সমস্ত মানবমন্ডলীকে উদারনীতির একসূত্রে আবদ্ধ করিয়া ইসল্ম পার্থিব উন্নতির চরম উতকর্ষ লাভ করিয়াছে।


পন্ডিত জহরলাল নেহেরু লিখেছেন –
‘হযরত মহম্মদের প্রচারিত ধর্ম, এর সরলতা, ন্যায়নিষ্ঠা এবং এর বৈপ্লবিক গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা, সমতা ও ন্যায়নীতি পার্শ্ববর্তী রাজ্যের লোকেদের অনুপ্রাণীত করে। কারণ ঐ সমস্ত রাজ্যের জণসাধারনের দীর্ঘদিন যাবত একদিকে শাসক গোষ্টী কর্তৃক নিপীড়িত, শোষিত ও নির্যাতিত হচ্ছিল, অপর দিকে ধর্মীয় ব্যাপারে নির্যাতিত নিষ্পেষিত হচ্ছিল পোপদের হাতে…. তাদের কাছে এ নতুন ব্যবস্থা ছিল মুক্তির দিশারী।


রবীঠকুর লিখেছেন –
“মুহাম্মাদের আবির্ভাব কালে পৌত্তলিক আরবীয়রা যে তাঁহার একেশ্বরবাদ সহজে গ্রহণ করিয়াছিলে তাহা নহে, তাই বলিয়া তিনি তাহাদিগকে ডাকিয়া বলেন নাই, তোমাদের জন্য যাহা সহজ তাহাই তোমাদের ধর্ম, তোমরা বাপ দাদা ধরিয়া যাহা মানিয়া আসিয়াছে তাহাই তোমাদের সত্য। তিনি এমন অদ্ভুত অসত্য বলেন নাই যে, যাহাকে দশ জন মিলিয়া বিশ্বাস করা যায় তাহাই সত্য, যাহাকে দশ জন মিলিয়া পালন করা যায় তাহাই ধর্ম। একথা বলিলে উপস্থিত আপদ মিটিত কিন্তু চিরকালের বিপদ বাড়িয়া চলিত”। (গ্রন্থঃ সঞ্চয়; প্রবন্ধঃ ধর্মের অধিকার)


শেষে বলব, ইসলামের উপর যতই অত্যাচার হোক ইসলাম পৃথিবী থেকে কখনোই মুছে যাবেনা। সারা বিশ্বকেই একদিন ইসলামের পতাকাতলে আসতে হবে, আসতেই হবে। শাইখ আবদুল আজিজ বিন বায “ইসলাম পৃথিবীর বুকে সূর্যের মতন যা কখনো পুরোপুরি হারিয়ে যায় না। যদি কোন স্থানে সে অস্তমিত হয়, অন্য আরেকটি স্থান আলোকিত করে জেগে উঠে।”

ইসলাম কি তরবারির জোরে প্রসার লাভ করেছে?

শেখ ফরিদ আলম

হামেশাই ইসলাম সম্পর্কে একটা অপবাদ দেওয়া হয় যে ইসলাম প্রসার লাভ করেছে তরবারীর জোরে। মানে বলপ্রয়োগ করে। মুসলমানরা কোন রাজ্য জয় করলে রাজ্যবাসীদের নাকি মুসলিম হতে বাধ্য করতেন নতুবা কতল করতেন। এই কথা যে ১০০% মিথ্যা তার হাজারো প্রমান আছে। একজন সাধারণ বুদ্ধিসম্পন্ন মানুষও নিজের বুদ্ধির অল্প ব্যবহার করেও বুঝে যাবে এটা কতটা অযৌক্তিক আর মিথ্যায় ভরা অপবাদ। যেমন ধরুন, স্পেন বা ভারত উপমহাদেশে মুসলিমরা ১০০০ বছরের মতো শাসন করেছে। কিন্তু এসব দেশে কি মুসলিমরা সংখ্যাগরিষ্ট? নাহ, এখানে মুসলিমদের থেকে কয়েক গুন বেশি অমুসলিম আছে। যদি এদের জবরদস্তি মুসলিম করা হতো তবে কি এখানে অমুসলিম থাকার কথা ছিল? নাহ, ১০০০ বছর ধরে অমুসলিমদের জবরদস্তি মুসলিম করা হলে একজন অমুসলিমও থাকার কথা নয়। আরো দেখুন, আরব দেশ গুলোতে চৌদ্দ’শ বছর ধরেই মুসলিমরা শাসন করছে তারপরেও সেইসব দেশে যথেষ্ট পরিমাণে অমুসলিম আছে। এইসব দেশ জলন্ত উদাহরণ এটার যে মুসলিম শাসকরা জবরদস্তি অমুসলিমদের ইসলাম গ্রহন করতে বাধ্য করেননি।


মালয়েশিয়া বা ইন্দোনেশিয়ার কথা ধরুন এখানে মুসলিমরা সংখ্যাগরিষ্ট। ইন্দোনেশিয়া বর্তমানে বিশ্বের বৃহত্তম মুসলিম রাষ্ট্র। কবে, কোন সৈন্য এ দেশ দুটিতে তরবারীর জোরে ইসলামের বিস্তৃতি ঘটিয়েছে? এখানে তো মুসলিম সম্রাটরা কখনোই শাসন করেনি। এরা মুসলিম হয়েছে ইসলামের সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়ে, তরবারী জোরে নয়।ইসলাম বা মুসলিমরা কি সত্যিই অমুসলিমদের জবরদস্তি মুসলিম করেছে? অনান্য ধর্মে হস্তক্ষেপ করেছে? ধর্মপালনে বাধা দিয়েছে? এসব ব্যাপারে ঐতিহাসীকদের মতকেই অধিক গুরুত্ব দেওয়া উচিত। কারণ, তাঁদের কাজই ইতিহাস নিয়ে গবেষনা করা আর সত্যান্বেষন করা। আসুন কয়েকজন ঐতিহাসিক এবং সত্যান্বেষীর মতামত জানা যাক –


◆ ইসলাম কোন ধর্মের নীতিতে হস্তক্ষেপ করেনি। কোন ধর্মের অবজ্ঞা করেনি। কোন ধর্মীয় বিচারালয় বিধর্মীদের শাস্তি প্রদানের জন্য প্রতিষ্ঠা করেনি। ইসলাম কখনো লোকদের ধর্মকে বলপূর্বক পরিবর্তনের সংকল্প করেনি। [M.D Saint Hiller]

◆ ঐতিহাসিক পি.কে হিট্টি বলেন – মুসলমান আইনের আওতার বাইরে থেকে অমুসলিমরা তাদের নিজেদের ধর্মীয় নেতা কর্তৃক পরিচালিত আইন কানুন মেনে চলার সম্পূর্ণ অধিকারী ছিলেন। [মধ্যযুগের রুপরেখা/১০৪ পৃষ্ঠা]

◆ স্যার পি.সি রায় বলেছেন – একথা সরাসরি মিথ্যা যে, ইসলাম তরবারির জোরে প্রচারিত হয়েছে। ইসলাম যদি তরবারির দ্বারাই প্রচার লাভ করবে তবে মুসলমানের রাজত্ব হওয়া সত্ত্বেও এত হিন্দু কি করে বসতি লাভ করল? যদি ও কথা সত্য হয়, তবে হিন্দুদের ঐ অঞ্চল থেকে নিশ্চিহ্ন হয়ে যাওয়া উচিত ছিল। [করাচি অভিভাষন, ২৯ আগষ্ট ১৯৩২]

◆ ঐতিহাসিক আর্নল্ড বলেছেন – মুসলিম মুজাহিদদের একহাতে তলোয়ার আর অপর হাতে কুরান – পাশ্চাত্য মনীষীদের এই চিত্র ঔপন্যাসিক সত্যতা থেকে কিছু মাত্র বেশি গুরুত্বপুর্ণ নয়। [দ্য প্রিচিং অব ইসলাম]

◆ মুসিওমিদিও বলেছেন – ইসলামের প্রতি অনর্থক দোষারোপ করে বেশিরভাগ সেই সমস্ত লোক, যারা সাম্প্রদায়িকতার ব্যধিতে আচ্ছন্ন হয়ে রয়েছে অথবা স্বল্পবিদ্যা হেতু ইসলামকে ঠিক বুঝতে পারেনি।

◆ ড. গিস্টাড লিবান বলেছেন – সত্যি বলতে কি, ইসলাম ধর্ম তরবারি দ্বারা প্রচারিত হয়নি বরং বক্তৃতাতে লোকে সাগ্রহে ইসলাম গ্রহন করেছে।

ঐতিহাসিকদের বক্তব্য থেকে বোঝা যাচ্ছে ইসলাম তরবারি দিয়ে প্রসার লাভ করেনি। না মুসলমান শাসকরা অনান্য ধর্মের প্রতি অত্যাচার-অবিচার করেছে। ইসলাম যে তরবারির দ্বারা প্রচারিত হয়নি এর সবথেকে বড় উদাহরণ হল বর্তমানে পৃথিবীতে সবথেকে বর্ধনশীল ধর্ম হল ইসলাম। আর পাশ্চাত্যেই এর বিস্তার হচ্ছে সবচেয়ে দ্রুতগতিতে। প্রশ্ন হচ্ছে পাশ্চাত্যে কোন মুসলিম এদের ইসলাম গ্রহনে বাধ্য করছে?


ইসলাম কি তরবারির জোরে প্রসার লাভ করেছে?

শেখ ফরিদ আলম

হামেশাই ইসলাম সম্পর্কে একটা অপবাদ দেওয়া হয় যে ইসলাম প্রসার লাভ করেছে তরবারীর জোরে। মানে বলপ্রয়োগ করে। মুসলমানরা কোন রাজ্য জয় করলে রাজ্যবাসীদের নাকি মুসলিম হতে বাধ্য করতেন নতুবা কতল করতেন। এই কথা যে ১০০% মিথ্যা তার হাজারো প্রমান আছে। একজন সাধারণ বুদ্ধিসম্পন্ন মানুষও নিজের বুদ্ধির অল্প ব্যবহার করেও বুঝে যাবে এটা কতটা অযৌক্তিক আর মিথ্যায় ভরা অপবাদ। যেমন ধরুন, স্পেন বা ভারত উপমহাদেশে মুসলিমরা ১০০০ বছরের মতো শাসন করেছে। কিন্তু এসব দেশে কি মুসলিমরা সংখ্যাগরিষ্ট? নাহ, এখানে মুসলিমদের থেকে কয়েক গুন বেশি অমুসলিম আছে। যদি এদের জবরদস্তি মুসলিম করা হতো তবে কি এখানে অমুসলিম থাকার কথা ছিল? নাহ, ১০০০ বছর ধরে অমুসলিমদের জবরদস্তি মুসলিম করা হলে একজন অমুসলিমও থাকার কথা নয়। আরো দেখুন, আরব দেশ গুলোতে চৌদ্দ’শ বছর ধরেই মুসলিমরা শাসন করছে তারপরেও সেইসব দেশে যথেষ্ট পরিমাণে অমুসলিম আছে। এইসব দেশ জলন্ত উদাহরণ এটার যে মুসলিম শাসকরা জবরদস্তি অমুসলিমদের ইসলাম গ্রহন করতে বাধ্য করেননি।


মালয়েশিয়া বা ইন্দোনেশিয়ার কথা ধরুন এখানে মুসলিমরা সংখ্যাগরিষ্ট। ইন্দোনেশিয়া বর্তমানে বিশ্বের বৃহত্তম মুসলিম রাষ্ট্র। কবে, কোন সৈন্য এ দেশ দুটিতে তরবারীর জোরে ইসলামের বিস্তৃতি ঘটিয়েছে? এখানে তো মুসলিম সম্রাটরা কখনোই শাসন করেনি। এরা মুসলিম হয়েছে ইসলামের সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়ে, তরবারী জোরে নয়।ইসলাম বা মুসলিমরা কি সত্যিই অমুসলিমদের জবরদস্তি মুসলিম করেছে? অনান্য ধর্মে হস্তক্ষেপ করেছে? ধর্মপালনে বাধা দিয়েছে? এসব ব্যাপারে ঐতিহাসীকদের মতকেই অধিক গুরুত্ব দেওয়া উচিত। কারণ, তাঁদের কাজই ইতিহাস নিয়ে গবেষনা করা আর সত্যান্বেষন করা। আসুন কয়েকজন ঐতিহাসিক এবং সত্যান্বেষীর মতামত জানা যাক –


◆ ইসলাম কোন ধর্মের নীতিতে হস্তক্ষেপ করেনি। কোন ধর্মের অবজ্ঞা করেনি। কোন ধর্মীয় বিচারালয় বিধর্মীদের শাস্তি প্রদানের জন্য প্রতিষ্ঠা করেনি। ইসলাম কখনো লোকদের ধর্মকে বলপূর্বক পরিবর্তনের সংকল্প করেনি। [M.D Saint Hiller]

◆ ঐতিহাসিক পি.কে হিট্টি বলেন – মুসলমান আইনের আওতার বাইরে থেকে অমুসলিমরা তাদের নিজেদের ধর্মীয় নেতা কর্তৃক পরিচালিত আইন কানুন মেনে চলার সম্পূর্ণ অধিকারী ছিলেন। [মধ্যযুগের রুপরেখা/১০৪ পৃষ্ঠা]

◆ স্যার পি.সি রায় বলেছেন – একথা সরাসরি মিথ্যা যে, ইসলাম তরবারির জোরে প্রচারিত হয়েছে। ইসলাম যদি তরবারির দ্বারাই প্রচার লাভ করবে তবে মুসলমানের রাজত্ব হওয়া সত্ত্বেও এত হিন্দু কি করে বসতি লাভ করল? যদি ও কথা সত্য হয়, তবে হিন্দুদের ঐ অঞ্চল থেকে নিশ্চিহ্ন হয়ে যাওয়া উচিত ছিল। [করাচি অভিভাষন, ২৯ আগষ্ট ১৯৩২]

◆ ঐতিহাসিক আর্নল্ড বলেছেন – মুসলিম মুজাহিদদের একহাতে তলোয়ার আর অপর হাতে কুরান – পাশ্চাত্য মনীষীদের এই চিত্র ঔপন্যাসিক সত্যতা থেকে কিছু মাত্র বেশি গুরুত্বপুর্ণ নয়। [দ্য প্রিচিং অব ইসলাম]

◆ মুসিওমিদিও বলেছেন – ইসলামের প্রতি অনর্থক দোষারোপ করে বেশিরভাগ সেই সমস্ত লোক, যারা সাম্প্রদায়িকতার ব্যধিতে আচ্ছন্ন হয়ে রয়েছে অথবা স্বল্পবিদ্যা হেতু ইসলামকে ঠিক বুঝতে পারেনি।

◆ ড. গিস্টাড লিবান বলেছেন – সত্যি বলতে কি, ইসলাম ধর্ম তরবারি দ্বারা প্রচারিত হয়নি বরং বক্তৃতাতে লোকে সাগ্রহে ইসলাম গ্রহন করেছে।

ঐতিহাসিকদের বক্তব্য থেকে বোঝা যাচ্ছে ইসলাম তরবারি দিয়ে প্রসার লাভ করেনি। না মুসলমান শাসকরা অনান্য ধর্মের প্রতি অত্যাচার-অবিচার করেছে। ইসলাম যে তরবারির দ্বারা প্রচারিত হয়নি এর সবথেকে বড় উদাহরণ হল বর্তমানে পৃথিবীতে সবথেকে বর্ধনশীল ধর্ম হল ইসলাম। আর পাশ্চাত্যেই এর বিস্তার হচ্ছে সবচেয়ে দ্রুতগতিতে। প্রশ্ন হচ্ছে পাশ্চাত্যে কোন মুসলিম এদের ইসলাম গ্রহনে বাধ্য করছে?


Friday 9 September 2016

হোক শিক্ষা ব্যবস্থার মেক ওভার !


রবীন্দ্রনাথের তোতাপাখির বুলি আওড়ানোর গল্পটা কিংবা প্রমথ চৌধুরির শিক্ষা ব্যবস্থা সম্পর্কীত প্রবন্ধ গুলো পড়লেই বোঝা যাবে আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থা কতটা খারাপ। এই শিক্ষা পুরোপুরি মুখস্থ নির্ভর আর চাকরির জন্য প্রস্তুতি ছাড়া কিছুই নয়। যদি কেউ চাকরি না পাই আর ব্যবসা করতে চাই তবে ১৪-১৫ বছর ধরে পড়া এই শিক্ষা তার কোন কাজেই লাগবেনা। স্কুল কলেজে পড়ে কেউ ভালো মানুষ হয় বলেও আমি মনে করিনা। তবে মিশন গুলোর কথা আলাদা। রামকৃষ্ণ মিশন, আল আমিন মিশন, আজাদ একাডেমি এসবে পড়ে শিক্ষার সাথে সাথে চরিত্র, নৈতিকতা ও ব্যক্তিত্বও তৈরি হয়। আমার মনে হয় বর্তমান ‘পূথিগত শিক্ষা’র সিলেবাসে কয়েকটি বিষয় যোগ করলে অনেক উপকার হবে ছাত্র ছাত্রী, সমাজ এবং দেশের। যেমন –
❖ প্রতিদিন একটি ক্লাস হবে যেখানে নিউস পেপারের বিভিন্ন খবর নিয়ে শিক্ষক এবং ছাত্রদের মাঝে আলোচনা চলবে। দেশ, দুনিয়ার সব ঘটনা নিয়ে চলবে তর্ক-বিতর্ক, আলোচনা।
❖ প্রতি মাসে একটি করে স্কুল ম্যাগাজিন প্রকাশ করা হবে। যেখানে ছাত্র ছাত্রী এবং শিক্ষকগণ লিখবে। এর জন্য ছাত্রছাত্রীদের কাছে কিছু ফি নেওয়া যেতে পারে অথবা স্কুল ফান্ড থেকেই চলতে পারে এই কাজ। প্রতিটা ছাত্রই এই ম্যাগাজিন পাবে এমন ব্যবস্থাও করা উচিত।
❖ ছাত্র ছাত্রীদের নৈতিকতা, চরিত্র, ব্যক্তিত্ব, বুদ্ধিমত্তা তৈরি করার জন্য ডেল কার্নেগীর মতো লেখকদের বই প্রতিটা ক্লাসেই পড়ানো। অথবা বিভিন্ন ধর্মগ্রন্থ, ধর্মগুরু, বিভিন্ন দেশের মনীষী, শিক্ষনীয় গল্প দিয়ে ভালো বই তৈরি করা যেতে পারে। এই ধরনের শিক্ষা যতদিন ছাত্র ছাত্রীরা না পাবে সমাজ বা দেশ তাদের কাছ হতে উপকারও পাবেনা।
❖ মাধ্যমিকের পরে বিভিন্ন ব্যবসার আইডিয়া নিয়ে পড়ানো। যেমন, পোল্ট্রি ফার্ম, ডেয়ারী ফার্ম, মাছ চাষ, বিভিন্ন হাতের কাজ, ছোট শিল্প এসব ব্যাপারে ট্রেনিং+জ্ঞান থাকলে পড়াশোনা শেষ করে চাকরির জন্য পাগল হবেনা। দরকার পড়লে নিজেই নিজের কেরিয়ার তৈরি করে নিতে পারবে।
এই রকম আরো কিছু উদ্যোগ নেওয়া যেতে পারে। এতে করে সত্যিকারের মানুষ তৈরি করা সম্ভব হবে। এখনও আমাদের সমাজে বি.এ, এম.এ পাশ করা মানেই খুব ভালো ছেলে/মেয়ে বলে ধরা হয়। অথচ এই শিক্ষা কখনো ভালোত্বের সার্টিফিকেট দেয়না। সবচেয়ে খারাপ লাগে এসব নিয়ে কেউ আওয়াজ তুলেনা। সবাই ভেড়ার পালের মতো অনুসরণ করে। সবকিছুকে মেনে নেয়। ‘চলো পাল্টাই’ বলার লোকের খুব অভাব আমাদের সমাজে।

‘মুজাহীদরা যদি সহীহ পথে থাকে তাহলে বিজয়ী হচ্ছেনা কেন? যেখানে আল্লাহ তা'আলা ওয়াদা করেছেন তিনি মুমিনদের সাহায্য ও বিজয়ী করবেন।


বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠাকল্পে জিহাদকে ফরয করা হয়েছে ইসলামে। আর তাই সারা বিশ্বেই অনেক মুসলিম নেমে পড়েছেন জিহাদের ময়দানে। প্রায় ১৫-২০ বছর ধরে ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার নামে, শরীয়াহ আইন লাগুর নামে বিক্ষোপ, বিশৃঙ্খলা অতঃপর গৃহযুদ্ধ লেগেছে কয়েকটি মুসলিম রাষ্ট্র্বে। জিহাদ ফরয অবশ্যই কিন্তু জিহাদের পরিস্থিতি তৈরি হলে জিহাদ করা এবং জিহাদের পরিস্থিতি তৈরি করে জিহাদ করা নিশ্চয় এক নয়। জিহাদ ও সন্ত্রাস এক নয়। তবে অনেকেই এগুলোকে গুলিয়ে ফেলে। নাস্তিক ও সেক্যুলারদের মুকাবিলা করার নামে ও ক্ষমতা দখলের উদ্দেশ্যে ইসলামী নেতারা/মুজাহীদরা একে একে যেসব কৌশল নিচ্ছেন, তাতে ইসলামের কল্যাণের চাইতে অকল্যাণ বেশী হচ্ছে। সেই সাথে সাধারণ মুসলমানদের দুর্ভোগ বাড়ছে ও ইসলাম সম্পর্কে বিরোধীদের অপপ্রচারের সুযোগ মিলে যাচ্ছে। ফলে বেশ কয়েকটি মুসলিম দেশ আজ উত্তপ্ত, সারা বিশ্বেই মুসলিমরা অপমানিত, লজ্জিত। সন্ত্রাসবাদী সন্দেহে অনেক মুসলিম জেল খাটছে, অত্যাচারিত হচ্ছে। চারিদিকে জন্ম হয়েছে অনেক মুজাহীদের। কেউ বলছে এরা সঠিক কাজ করছে আবার কেউ বলছে ভুল। তবে একটা প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে জ্ঞানীদের মহলে, ‘মুজাহীদরা যদি সহীহ পথে থাকে তাহলে বিজয়ী হচ্ছেনা কেন? যেখানে আল্লাহ তা'আলা ওয়াদা করেছেন তিনি মুমিনদের সাহায্য ও বিজয়ী করবেন। আসুন সেই ব্যাপারে বিস্তারিত জানি সিরিয়ার প্রতিভাধর কুর'আন ও সহীহ সুন্নাহর অনুসারী আলেম মুহাম্মাদ বিন জামীল যাইনুর লেখা একটি বিখ্যাত বই 'ফির্কাহ নাজিয়াহ' থেকে। অবশ্যই হুবহু আমি কপি করছিনা। কিছুটা সংক্ষেপে করার চেষ্টা করেছি। কিছু সংযোজনও করেছি এবং বোঝার সুবিধার জন্য নিজের মতো করে সাজিয়েছি। যাইহোক লেখাটাতে তিনটা ভাগ আছে। বিজয় লাভের শর্তাবলী, মুমিনদের বিজয়ী করা আল্লাহর দায়িত্ব, বর্তমান মুজাহীদরা বিজয়ী হচ্ছেনা কেন? 

❝বিজয় লাভের শর্তাবলী❞ 

মুহাম্মাদ সা. এর জীবন চরিত ও তাঁর জিহাদ বিষয়ক ইতিহাস পাঠ করলে তাঁর জীবনে নিন্মলিখিত পর্যায় দেখতে পাবেন – 
❖ তাওহিদের পর্যায় – রাসুল সা. মক্কায় ১৩ বছর অবস্থানকালে আপন সম্প্রদায়কে উপাসনা, প্রার্থনা, বিচার-ভার প্রভৃতিতে আল্লাহর একাত্ববাদের প্রতি এবং শির্কের বিরুদ্ধে সংগ্রামের প্রতি ততদিন আহ্বান করলেন যতদিনে এই বিশ্বাস তাঁর সহচরদের মন-মূলে সুদৃঢ়ভাবে স্থান করে নিল এবং দেখা গেল যে, তাঁরা এখন নির্ভীক বীরদল রূপে প্রস্তত হয়েছেন যাঁরা আল্লাহ ব্যতীত আর কারো ভয়ে মোটেই ভীত নন। তাই ইসলামের দাওয়াত পেশকারীদের জন্য তাওহীদের প্রতি আহ্বান এবং শির্ক হতে সাবধান করার মাধ্যমেই তাঁদের দাওয়াত আরম্ভ করা ওয়াজেব। যাতে তাঁরা এই কর্মে রাসুল সা. এর অনুসারী হন।

❖ ভ্রাতৃত্ব-বন্ধন পর্যায় – সম্প্রীতি ও সৌহার্দ্যের উপর প্রতিষ্ঠিত মুসলিম সমাজ গড়ে তোলার উদ্দেশ্যে তিনি মক্কা ত্যাগ করে মদিনায় হিজরত করলেন। সেখানে সর্বাগ্রে তিনি এক মসজিদ নির্মাণ করলেন। যাতে মুসলিমরা ঐ মসজিদে তাদের প্রতিপালকের ইবাদত আদায়ের জন্য সমবেত হতে পারে এবং জীবনকে নিয়মানুবর্তী করার লক্ষ্যে প্রত্যহ পাঁচবার সমাবেশ করার সুযোগ লাভ হয়। অতঃপর শীঘ্রই তিনি মদীনাবাসী আনসার এবং সম্পদ ও গৃহত্যাগী মক্কাবাসী মুহাজেরীনদের মাঝে ভ্রাতৃত্ব-বন্ধন স্থাপন করে দিলেন। এতে আনসারগণ মুহাজেরীনকে তাঁদের নিজস্ব সম্পদ দান করলেন এবং তাঁদের প্রয়োজনীয় যাবতীয় বস্তু তাঁদের সেবায় উতসর্গ করে দিলেন। মদিনাবাসীদের দুটি গোত্র আওস ও খওরজ। তিনি দেখলেন ঐ দুই গোত্রের মাঝে প্রাচীন শত্রুতা বর্তমান। তাই এদের মাঝে সন্ধি স্থাপন করলেন, তাদের অন্তর থেকে বিদ্বেষ ও বৈরিতা মুছে ফেললেন এবং ঈমান ও তাওহীদে পরস্পর সম্প্রীতিশীল ভাই ভাই রুপে গড়ে তুললেন। যেমন হাদীসে বর্ণিত, ‘মুসলিম মুসলিমের ভাই ভাই....’।

প্রস্তুতি – শত্রুর বিরুদ্ধে প্রস্তুতি গ্রহণ করতে কুর’আন মুসলিমকে আদেশ করে। আল্লাহ বলেন, ‘এবং তোমরা তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধের জন্য যথাসাধ্য শক্তি প্রস্তুত (সঞ্চয়) কর’ [সুরা আন’ফাল/৬০]। ঐ শক্তির ব্যাখ্যায় রাসুল সা. বলেন, ‘জেনে রাখো, ক্ষেপণই হল শক্তি’ [মুসলিম]। সুতরাং প্রত্যেক মুসলিমের জন্য যথাসাধ্য অস্ত্র ক্ষেপণ শিক্ষা (আর্মি ট্রেনিং) নেওয়া ওয়াজেব। ইসলামীক রাষ্ট্রেরও উচিত স্কুল কলেজ গুলোতে এই ধরণের ট্রেনিং এর ব্যবস্থা করা। যাতে প্রয়োজনে প্রতিটা মুসলিম তার রাষ্ট্রকে রক্ষা করতে পারে। এবং রাষ্ট্রের উচিত যুদ্ধের জন্য শক্তি প্রস্তুত করা বা অস্ত্র শস্ত্র সঞ্চয় করা। 

[এবার একটু ভেবে দেখুন তো আমাদের সমাজের কথা। এই তিনটি বিষয়ের কোনটিও কি ঠিক আছে। তাওহীদের অর্থই তো অনেকে বুঝেনা। দেখা গেল যুদ্ধের ময়দানে পায়ে গুলি খেয়ে বলছে হে খাজাবাবা! হে পীর বাবা! আমারে বাচাঁও। এই রকম আক্বীদার লোকেদের কি আল্লাহ সাহায্য করবেন? আর ভ্রাতৃত্ব-বন্ধন এর কথা ভাবুন? আমরা কত দলে বিভক্ত। জাপানের ১০ লক্ষেরও বেশি আদিবাসী মাযহাবীদের লড়াইএর কারণে ইসলাম গ্রহণ করেনি। ভারতে ড. আম্বেদকার ৩০ কোটি নিন্মজাতের হিন্দুদের নিয়ে ইসলাম গ্রহন করতে চেয়েছিলেন কিন্তু এক মাজহাবী দল বলল আমাদের দলে এসো ওরা খারাপ আর আরেক দল বলল আমাদের দলে এসো ওরা খারাপ। আম্বেদকার ভেবেছিলেন ইসলাম ধর্মে জাতপাত নাই তাই তিনি ইসলাম গ্রহন করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু এই দলাদলি দেখে তিনি বৌদ্ধ ধর্ম গ্রহন করেন ত্রিশ কোটি হিন্দুদের নিয়ে। প্রস্ততির কথা সবারই জানা। লাঠি নিয়ে বন্দুকের বিরুদ্ধ লড়াই করা জিহাদ নাকি আত্মহত্যা?]

❝মুমিনদের বিজয়ী করা আল্লাহর দায়িত্ব❞

যখন আমরা তাওহীদের বিশ্বাসের প্রতি সকলে প্রত্যাবর্তন করব, যখন আমরা ভ্রাতৃত্ববন্ধনে আবদ্ধ হবো, মুসলিম মুসলিম ভাই হবো, যখন আমরা জিহাদের জন্য সঠিকভাবে প্রস্তুত হবো এবং উপযুক্ত শক্তি সঞ্চয় করবো তখন ইনশাল্লাহ ইনশাল্লাহ বিজয় আসবেই। আমরা এর উদাহরণ দেখেছি ইতিহাসে। যেমন রাসুল সা. এবং তাঁর সাহাবাদের জন্য বিজয় অনিবার্য হয়েছিল।

আল্লাহ বলেন, ‘হে ঈমানদারগণ! যদি তোমরা আল্লাহর (মনোনীত দ্বীন প্রতিষ্ঠায়) সাহায্য কর তাহলে আল্লাহ তোমাদেরকে সাহায্য করবেন এবং তোমাদের পদ সুদৃঢ় করবেন’ [সুরা মুহাম্মাদ/৭]

আল্লাহ আরো বলেন, ‘মুমিনদের সাহায্য করা আমার দায়িত্ব’ [সুরা রুম/৪৭]

উক্ত আয়াত গুলো থেকে বোঝাই যাচ্ছে আল্লাহ মুমিনদেরকে সাহায্য ও বিজয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। তা এমন এক প্রতিশ্রুতি যার অন্যথা হবেনা। সুতরাং তিনি তাঁর রাসুলকে বদর, খন্দক প্রভৃতি যুদ্ধে বিজয়ী করেছেন। এবং রাসুল সা. এরপর তাঁর সাহা্বাবর্গকে তিনি তাঁদের শত্রুদের উপর বিজয়ী করেছেন। যার ফলে ইসলাম প্রসার লাভ করেছে, বহু দেশ জয় হয়েছে এবং বিভিন্নমুখী আঘটন ও বিপদ সত্ত্বেও মুসলিমগণ জয়ী হয়েছেন। শেষে শুভ পরিণাম হয়েছে সেই মুমিনদের যাঁরা আল্লাহর প্রতি ঈমান, তাঁর তাওহীদ, ইবাদত এবং বিপদে ও সুখে তাঁদের প্রতিপালকের নিকট প্রার্থনাতে সত্যবাদিতার পরিচয় দিয়েছেন। কুর’আন মাজীদ বদর যুদ্ধে মুমিনদের অবস্থা বর্ণনা করেছে; যখন তাঁদের সংখ্যা ও যুদ্ধ সরঞ্জাম নিতান্ত নগণ্য ছিল। তাই তাঁরা তাদের প্রভুর নিকট প্রার্থনা জানিয়েছিলেন। আল্লাহ বলেন, ‘(স্মরণ কর) যখন তোমাদের প্রতিপালকের নিকট সকাতর সাহায্য প্রার্থনা করেছিলে তখন তিনি তা মঞ্জুর করেছিলেন (এবং বলেছিলেন) আমি তোমাদের একেরপর এক আগমনরত একসহস্র ফিরিশ্তা দ্বারা সাহায্য করব’ [সুরা আনফাল/৯] আল্লাহ তাদের সেই করুণ নিবেদন শ্রবণ করেছিলেন। তাই তাদের সপক্ষে যুদ্ধ করার জন্য ফিরিশ্তাদল দ্বারা তাঁদের সাহায্য করলেন। শেষ পর্যন্ত তাওহীদবাদী মুমিনগণ বিজয়ের মর্যাদায় ভুষিত হলেন। 

❝বর্তমান মুজাহীদরা বিজয়ী হচ্ছেনা কেন?❞

বর্তমানে আমরা দেখি যে, মুসলিমগণ অধিকাংশ দেশেই তাদের শত্রুদের বিরুদ্ধে যুদ্ধরত হচ্ছে বটে, কিন্তু বিজয় লাভ তারা করতে পারেনা। তাহলে এর কারণ কি? মুমিনদেরকে দেওয়া আল্লাহর ওয়াদা কি অন্যথ্যা হয়ে যাচ্ছে? না তা কক্ষনই নয়। আল্লাহর ওয়াদা কখনই ব্যতিক্রম হয়না। কিন্তু আজ কোথায় সে মুসলিমদল যাদের জন্য আয়াতে উল্লেখিত বিজয় আগত হবে।
আমরা মুজাহেদীনদেরকে জিজ্ঞেস করি যে – 
◆☛ তারা সেই ইমান ও তাওহীদসহ জিহাদের জন্য প্রস্তুতি নিয়েছেন কি? যে দুই কর্ম দ্বারা রাসুল সা. মক্কায় অবস্থানকালে যুদ্ধের পূর্বকালে নিজের দাওয়াত শুরু করেছিলেন?
◆☛ তারা সেই কারণ ও হেতু (উপায় ও উপকরণ) অবলম্বন করেছে কি? যার আদেশ তাদের প্রতিপালক এই বলে দিয়েছেন – ‘তোমরা (যুদ্ধের জন্য) যথাসাধ্য শক্তি প্রস্তত (সঞ্চয়) কর’। যে শক্তির ব্যখ্যায় রাসুল সা. বলেন, ‘তা হল ক্ষেপণ’।
◆☛ যুদ্ধের সময় তারা কি আল্লাহর নিকট সকাতর প্রার্থনা করেছে এবং কেবল তাঁরই নিকট সাহায্য ভিক্ষা করেছে? নাকি দু’আতে তাঁর সহিত অপরকেও শরীক করেছে এবং তাদের নিকট বিজয় প্রার্থনা করেছে যাদেরকে তারা আওলীয়া মনে করে থাকে? অথচ তারাও আল্লাহর দাস। যারা নিজেদের ব্যাপারেও ইষ্ট অনিষ্টের মালিক নয়। একমাত্র আল্লাহরই নিকট প্রার্থনা করার বিষয়ে তারা রাসুলের অনুসরণ করে না কেন? ‘আল্লাহ কি তাঁর বান্দার জন্য যথেষ্ট নন?’ [সুরা যুমার/৩৬]
◆☛ অবশেষে, তারা কি পরস্পর ঐক্যবদ্ধ ও সম্প্রীতিশীল এবং তাদের আদর্শবাণী কি আল্লাহর এই বাণী? ‘তোমরা আপোসে বিবাদ করো না; নচেত তোমরা সাহস হারাবে এবং তোমাদের চিত্তের দৃঢ়তা বিলুপ্ত হয়ে যাবে’ [সুরা আনফাল/৪৬]
◆☛ পরিশেষে একথা বলাই বাহুল্য যে, মুসলিমরা যখন তাদের ধর্মবিশ্বাস এবং দ্বীনের সেই নির্দেশাবলী উপেক্ষা করে বসল, যা শিক্ষা ও সংস্কৃতিমুলক প্রগতির প্রতি ধাবমান হতে আদেশ করে, তখন তারা সকল জাতি হতে পশ্চাদে পড়ে গেল। পুনরায় যখন তারা আপন দ্বীনের প্রতি প্রত্যাবর্তন করবে তখনই তাদের উন্নতি ও মান মর্যাদা ফিরে আওবে।
◆☛ অভীষ্ট ইমান বাস্তবায়িত হলে প্রতিশ্রুত বিজয় সুনিশ্চিত হয়ে আসবে। যেহেতু ‘মুমিনদের সাহায্য ও বিজয়ী করার দায়িত্ব আল্লাহ স্বয়ং নিয়েছেন’।

হাজীদের সেলফি এবং কিছু কথা...


হজে গিয়ে 'সেলফি' তোলা নিয়ে অনেক ভাই পোষ্ট করছেন। অনেকে খুব আক্রমনাত্মকভাবে, ব্যঙ্গ করেও পোষ্ট করছেন। অনেকে ছবি সহ হাজীদের ফটোও শেয়ার করছেন। ব্যাপারটা নিয়ে খুব বাড়াবাড়ি হচ্ছে বলে কিছু লিখতে বাধ্য হচ্ছি। অকারণে ফটো তোলা, সেলফি তোলা নিয়ে কিছু বলছিনা। এসব ব্যাপারে সবারই একটু আধটু জানাই আছে। আমি অন্য একটা ভয়ংকর ব্যাপার নিয়ে বলছি। আমি জানতে চাইছি হজে গিয়ে সেলফি তোলাটা কত বড় গুনাহর কাজ? কত বড় অপরাধ? আপনি হয়ত বললেন রিয়া। কিন্তু এটা বিতর্কিত ব্যাপার। এভাবে উপর দেখে যদি রিয়ার অভিযোগ করা হয় তবে কেউই রিয়ার অভিযোগ থেকে বাচবে না।

আচ্ছা, হজ করতে কারা যায়? নিশ্চয় ইমানদার মুসলিমরাই হজে যায়। কারন বিশ্বাসি মুসলিম না হলে তো হজে যাবেই না। যখন এটা প্রমানিত যে তারা আমাদের মুসলিম ভাই তখন কিভাবে আমরা তাদের ছবি দিয়ে প্রকাশ্যে তাদের গিবত করতে পারি? কিভাবে তাদের অপদস্থ করতে পারি? কিভাবে তাদের ভুল গুলোর প্রকাশ্যে প্রচার করতে পারি? কোনটা বড় অপরাধ হজে সেলফি তোলা নাকি মুসলিম ভাইয়ের সম্মানহানী করা?! ভাবুন। নিজের বিচার বুদ্ধি দিয়ে ভাববেন না, বিচার করবেন না, ইসলাম দিয়ে বিচার করুন।

মহান আল্লাহ বলেন, ‘হে বিশ্বাসীগণ! তোমরা অনেক ধারণা থেকে বেঁচে থাক। নিশ্চয়ই কতক ধারণা গুনাহ। আর কারো গোপন দোষ অনুসন্ধান কর না এবং পশ্চাতে নিন্দা করো না। তোমাদের কেউ কি তার মৃত ভায়ের গোশত খাওয়া পছন্দ করে? তোমরা একে ঘৃণাই কর’। [সুরা হুজুরাত/১২]
বিশ্বনবী (সা) বলেছেন, ‘যখন তুমি তোমার কোন ভাইয়ের এমন দোষের কথা বলবে যা তার মধ্যে আছে, তবে তুমি তার গীবত (নিন্দা) করলে। আর যখন তুমি তার সম্পর্কে এমন কথা বলবে যা তার মধ্যে নেই তাহলে তার প্রতি অপবাদ দিলে’। (মুসলিম, মিশকাত/৪৮২৯)।

এই পরনিন্দা কত ভয়ানক তার প্রমান হল এই পাপের তওবা করে ক্ষমা হয় না। যার নিন্দা করা হয়েছে তার কাছেই ক্ষমা নিতে হয়। বড় পাপ দু’ভাগে বিভক্ত। এক, আল্লাহর সাথে সম্পৃক্ত যা তাওবা ব্যতীত ক্ষমা হয় না। দুই, মানুষের সাথে সম্পৃক্ত যা তাওবা করে ক্ষমা হয় না বরং মানুষের নিকট ক্ষমা নিতে হয়, আর গীবত এ পাপের অন্তর্ভুক্ত। [কে বড় ক্ষতিগ্রস্ত, আব্দুর রাযযাক; ১৩১ পৃষ্ঠা]

তাহলে কি বোঝা গেল?! যদি ধরেই নেওয়া যায় হজে গিয়ে সেলফি তোলা অপরাধ। তারপরেও সেই ছবি দিয়ে নিন্দা করে, ব্যঙ্গ করে পোষ্ট করা যাবেনা। এটা অবশ্যই গিবত। এবার অন্য আরেকটা বিষয়ে আসি। যেটা হল সুধারণা করা। একজন মুসলিম সবসময় অন্য মুসলিম ভাইয়ের ব্যাপারে সুধারণা রাখবে। এটা তার জন্য আবশ্যকীয় কর্তব্য। একজন হাজী আর যাইহোক বিশ্বাসী মুসলিম। আর বিশ্বাসী মুসলিম ভাইয়ের ব্যাপারে সবসময় সুধারণা রাখতে হবে।

মহান আল্লাহ বলেন, “তোমরা যখন একথা [‘আয়েশার (রা) বিরুদ্ধে মিথ্যা রটনা] শুনলে, তখন ঈমানদার পুরুষ ও নারীগণ কেন নিজেদের লোক সম্পর্কে উত্তম ধারণা করনি এবং বলনি যে, এটা তো নির্জলা অপবাদ?” [সূরা আন-নূর, ২৪:১২]

নবী করীম (সা) বলেন: “অনুমান করা থেকে বেঁচে থাকো। কারণ অনুমান হলো সবচেয়ে বড় মিথ্যা। আর বেঁচে থাকো অন্যের দোষ খোঁজা থেকে, এবং অন্যের উপর গোয়েন্দাগিরি করা থেকে, বেঁচে থাকো (মন্দ কাজে) প্রতিযোগিতা করা থেকে, বেঁচে থাক অপরের হিংসা করা থেকে, অপরকে ঘৃণা করা থেকে এবং একে অপরকে পরিহার করা থেকে; এমনভাবে থাকো যেন তোমরা পরস্পর ভাই এবং আল্লাহ্‌র দাস”। [আল-বুখারী; খণ্ড ৮, অধ্যায় ৭৩, হাদীস নং ৯২]

মুসলিম ভাইয়ের কথা ও কাজকে সর্বোত্তম্ভাবে নেওয়া বা ব্যাক্ষা করাটা মুমিনের একটা ভালো গুণ। উমার (রা) বলেন, “তোমার বিশ্বাসী ভাইয়ের কোনো কথা (বা কাজ)-কে খারাপ অর্থে গ্রহণ করো না, যতক্ষণ পর্যন্ত তা ভালো অর্থে নেওয়ার সুযোগ থাকে।” ইবনে সিরিন (রহ) বলেন, “তুমি যদি জানতে পারো যে, কেউ তার কথা বা কাজের মাধ্যমে তোমার ক্ষতি করেছে, তাহলে তোমার উচিৎ সে কেন এমন করল তার উপযুক্ত কারণ খুঁজে বের করা; যদি কোনো কারণই খুঁজে না পাও, তবে তোমার বলা উচিৎ, ‘হয়তো এমন কোনো কারণ ছিল যা আমি জানি না।’

কেউ হজে গিয়ে সেলফি তুলল বা এই রকম কিছু একটা করল আর আপনি তার ছবি নিয়ে পোষ্ট করলেন। এতে কি তার কোন লাভ হল। এটা সময় নষ্ট ছাড়া কিছুই নয়।এটা কোন মুসলিমের কাজও নয়। আপনি তাকে পার্সোনাল ভাবে বুঝান এবং ইসলাহ করুন। প্রকাশ্যে নয়। আপনি যদি কারো ভুল ত্রুটি গোপন করবেন তবে আল্লাহ হাশরের মাঠে আপনার ভুল গুলোকে গোপণ করবেন। এত বড় সুযোগ কেন হাতছাড়া করবেন?

একজন মুসলিম অন্য মুসলিমের জন্য আয়না স্বরুপ। তাই তাকে সংশোধন করা আপনার দায়িত্ব। তার ভুল নিয়ে আলোচনা করা একদমই উচিত নয়। মুসলিম সবসময় তার মুসলিম ভাইয়ের জন্য কল্যান চাইবে। এটাই ইসলামের শিক্ষা। জারীর ইবনে আব্দুল্লাহ (রা) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সা) -এর হাতে শপথ (বাইআত) গ্রহণ করেছি নামাজ কায়েম করা, যাকাত আদায় করা, সকল মুসলমানের জন্য কল্যাণ কামনা ও উপদেশ দেয়ার। [বুখারী ও মুসলিম] তাই ভুলকারীদের জন্য কল্যান কামনা করুন, তাই করুন যা তাদের জন্য কল্যানকর। তাদের সঠিক উপদেশ দিন। এই সুযোগ না হলে তাদের জন্য দোয়া করুন। এটাই তাদের কাজে আসবে, আপনার সমালোচিত পোষ্ট নয়।